Sunday, March 3, 2013

অপলাপ এবং মৃত ঈশ্বর


মাথাব্যথা কয়েকদিন ধরে। মাথাটিপে ধরে সস্তার দোকানে প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেনা পেইন-কিলার গিলে দিন পার করি। ডাক্তারে অরুচি। নিজের জন্যে এতো ভাবতে ইচ্ছে করে না। নরক বলে যদি কিছু থাকে, তবে সেখানে যেতে রাজি আছি, এই মুহূর্তে। জীবনে কোথাও কোন অতৃপ্তি নেই, কিংবা কোন অনুশোচনাও। বেঁচে আছি, তাই নানান লৌকিকতা এখনো করে যাচ্ছি।

-
কাল থেকে বৃষ্টি। গরম নেমে গেছে এক লাফে। কুলার দরকার হয় না। তবে, সাইকেলে চড়ে ছাতা নিয়ে বৃষ্টি মাথায় বেরুনো বেশ ঝামেলার। আইন বলে, ব্যাপারটা নিষিদ্ধ। মানে, সাইকেলে চড়লে ছাতা মাথায় দেওয়া যাবে না, ছাতা মাথায় দিলে সাইকেল থেকে নেমে হেঁটে যেতে হবে। তবে, পুলিশে কিছু বলে না।
পুলিশে ধরে, সাইকেলে লাইট না থাকলে। আমার সাইকেলের লাইট ভেঙে গেছে, এক মাস হলো। আমার সাইকেলের সাথে গায়ে গা লাগানো নিজের সাইকেল বের করতে গিয়ে একজন সুবোধ মানুষ আমারটা ফেলে দিয়ে লাইট ভেঙে ফেলেছে। আমার সামনেই ঘটেছে। কিছু বলতে ইচ্ছে করে নি। মুচকি হেসে নিজের সাইকেলটা ঠিক করে রেখে, ভাঙা লাইটটা পকেটে ঢুকিয়ে ফিরে এসেছি।

সাইকেল নিয়ে ইদানিং বেশ ঝামেলায়ও আছি। ব্রেক কাজ করে না। গত পরশু গাড়ির সামনে আরেকটু হলে পিষে পড়ার উপক্রম হয়েছিলো। কীভাবে যেনো বেঁচে গেছি। গাড়িটা আস্তে চলছিলো, তাই ব্রেক করে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আইন বলবে, আমারই দোষ।


-
একটা বই পড়ছি, The Kite Runner। অনেকদিন পরে কিছু একটা মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। চেষ্টা করছি। নষ্ট হয়ে যাওয়া বই পড়ার অভ্যাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। অরুপ ভাইর পছন্দের বই। মাঝেমাঝে পড়ছি।

আফগান বংশোদ্ভূত লেখক
খালেদ হোসাইনি র হাতে, আফগান সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঝরঝরে ভাষায় গল্পের নির্মাণ। খালেদ এর বয়েস যখন আট, রাজা জহির শাহের পতন হয়। তার ডিপ্লোম্যাট বাবা পালিয়ে যান প্যারিসে, যখন খালেদ এগারোতে। পরে ইউএসএ তে, বাবার রাজনৈতিক আশ্রয়ের সূত্রে। সেখানেই কাটিয়ে দেন বাকি জীবন। যে জন্যে এই কথা বলছিলাম, বই এর যতটুকু পড়েছি, ততটুকু পড়ে কখনো মনে হয় নি ভদ্রলোক আফগানিস্তানে তার শৈশবের খুব অল্প সময় ছাড়া থাকার সুযোগ পান নি।

পুরো বই পড়া হলে লেখা হবে হয়তো বাকিটা।

-
বন্ধুহীন হয়ে পড়েছি। সময়েই সব বদলে যায়। সব মঞ্চ ভাঙে, পড়ে থাকে শুধু স্মৃতি। সব আড্ডার পাত্র-পাত্রীরা বদলে যায়, থাকে শুধু আড্ডার জায়গা। নতুনেরা আসে। ভাঙার জন্যে দরকার হয় একটা টুকরো ঘটনা অথবা উপলক্ষ্য। রাজশাহীতে নিউমার্কেটের ছাদে একসময় বসতাম। এখনো দুই বছরে একবার দেশে গেলে দেখি, নতুনেরা আড্ডা দিচ্ছে। পরিচিত কাউকে আর চোখে পড়ে না।

দেশ ছেড়েও সেলফোনের কল্যাণে কাছের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ ছিলো। সময়ে-অসময়ে ফোন করেছি একটা সময়। এখন সেই যোগাযোগ শূন্যের কাছাকাছি। প্রযুক্তির প্যাকেজে ড়্যাপ করে ফেলা বন্ধুত্ব এখন এক চিমটি এসএমএস, তিন ফোটা ফেসবুক, সামান্য ইন্সট্যান্ট মেসেজিং। ফেসবুকে কারও ছবি দেখে গতানুগতিক কপি-পেস্ট, "তোকে যা লাগছে নাহ"।

খুব কাছাকাছি সবাই মোটামুটি নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত। চাকুরি,ক্যারিয়ার, কর্পোরেট জীবনে উপরে ওঠা, নিজের পার্টনার - আইনসিদ্ধ অথবা অসিদ্ধ, বিয়ে, ভাঙা-গড়া, কারও বাচ্চা-কাচ্চা এবং অন্যকিছু। তাই আর বিরক্ত করি না কাউকে। কার জন্যে কে সময় দেয়? কে এখন বন্ধু? বন্ধুত্ব এখন দিবস করে আসে। বাকি সব দিন সব্বাই একা। আদতে।
এইরকম করে মঞ্চ ভেঙে যায়। আমরা যেনো কয়েকদিনের জন্যে স্টেজ শো করতে আসা যাত্রার দলের ওয়ানটাইম অভিনয়ের পার্শ্বচরিত্র। পরের স্টেজ শো তে আর আমাদের দরকার নেই।
এইসবই এখন স্বাভাবিক, অথবা বাস্তব নিয়ম।

-
এইসব কেন লিখি? লোকের পড়ার জন্যে? নিজের অনুভূত কষ্টে লোকের সহানুভূতি চাইছি? মাঝেমাঝে নিজের ভন্ডামিকে নিজেই প্রশ্ন করে বসি। তবে, আজ স্বীকার করে যাই, হ্যা, আমি আসলে খুব ভন্ড। কোনটা যে আমি, আর কোনটা যে আমার অস্তিত্ব, আমি জানি না। এইসব কথা কাউকে কখনো বলা হয় না, তাই লিখে রাখি।

ভরা হাটের মাঝে কারও মেকি হাসিমুখ তার বর্তমান নয়, ভার্চুয়াল ব্লগে লেখা কারও সাজানো-গোছানো গল্পও পুরোপুরি সে নয়। পেসিমিস্টদের ঈশ্বর থাকে না, তাদের গল্পও এভাবে লেখা যায় না। পেসিমিস্টদের মন থেকে ঈশ্বর একটা সময় পরে আপনা আপনি মরে যায়।
সত্যি কথা বললে রূঢ় শোনায়, তবুও বলি, এইসব আগাছা হতাশাবাদী যতো তাড়াতাড়ি বিদায় নেয় এই বাস্তব ও আনন্দময় পৃথিবী ছেড়ে, ততোই জগতের মঙ্গল। পুরো জগত তাই মনে করে। যার সৌন্দর্য উপভোগের ক্ষমতা নেই, সৌন্দর্য প্রদর্শনী ছেড়ে চলে যাওয়াই সমীচীন। আমি জানি, আপনিও তাই ভাবেন। নয় কি?



--
[কমেন্ট অপ্রার্থনীয়, সেজন্যে ক্ষমা চাইছি।
ছবি কৃতজ্ঞতা, ডেনিস কোলেট, কপিরাইট - সিসিএল ]

No comments:

Post a Comment