মেঘলা শ্রাবণ (প্রথম পর্ব)
---- creationofanunstablemind
---- creationofanunstablemind
বারান্দার সেই পুরনো গ্রিল থেকে বয়ে আসা চেনা পরিচিত বাতাস এসে ভিড় জমিয়েছে । বাতাসে কেমন যেন অচেনা গন্ধ; ঠিক শ্রাবণের মনের মত, অশান্ত । এক সময় রাত জেগে এখানে গিটার বাজাতো সে, সেই অভ্যাস বহু আগেই ছেড়ে দিয়েছে । আপন বলতে এখন এই বারান্দাটা আর মেঘলা ছাড়া হয়তো তার কেউ নেই । মেঘলার সাথে যোগাযোগ নেই প্রায় দু সপ্তাহ হল । বারান্দায় বসে আছে শ্রাবণ, গত কয়েকদিনে বেশ চুপচাপ হয়ে গেছে । খুব একটা বাইরে বের হয় না; অথচ এক সময় সব বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতো সে । বেশ আনমনা হয়ে গেছে, মেঘলার কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চোখ পড়ে পাশের বাড়ির ছাদে । এক জোড়া চড়ুই ছাদের এক ফোঁকরে । মেঘলার জন্য মনটা আবার কেমন যেন করে উঠলো, মনে পড়তে লাগলো মেঘলার সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো । বাতাসে অশান্ত গন্ধ গুলোর আনাগোনা বাড়তে শুরু করেছে ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রথম দেখা হয় মেঘলা'র সাথে । শুধু এক ঝলক, এত মানুষের ভিড়ে কেন যেন ওই একটা মুখের দিকেই বারবার চোখ আটকে যাচ্ছিলো, কিন্তু কোন কথা হয়নি । মেঘলারও চোখ পড়েনি শ্রাবণের দিকে । বিভিন্ন কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় অনেকের সাথেই পরিচয় শ্রাবণের । তেমন পরিচিত এক অথৈ এর মাধ্যমে এক মেঘলা'র সাথে পরিচয় হয় । বয়সে শ্রাবণের চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট । পরিচয়ের পর ফেসবুকে অ্যাড করে রাত ১০ টা ০২ মিনিটে । প্রথম দেখাতেই মেয়েটাকে ভালো লেগে যায় শ্রাবণের । অল্প অল্প করে কথা হতে হতে একসময় দুজনেরই কথার ঝুলি বেড়ে যায় । কথা হয় অনেক, প্রতিদিনের কথাগুলো যেন শ্রাবণের হঠাৎ করে শুধু তাকেই বলতে ইচ্ছা হয় । মেঘলার'র প্রত্যেকটা কথায় যেন খুঁজে পেতে থাকে এক ধরনের মিল, অস্তিত্বের মুখোশে হারিয়ে যাওয়া কেউ যেন হঠাৎ করেই খুঁজে পেতে থাকে সবকিছু । কেমন যেন এক অনুভূতি, দুর্ধর্ষ টর্নেডো যেমন থেমে যাবার আগে সর্বশেষ চেষ্টা করে সবকিছু ধ্বংস করে দেবার, মানুষও অনেকটা এমনি, যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখনি কিন্তু শেষ মরণকামড় দেয়ার অপেক্ষায় থাকে । ঐ হারিয়ে যাওয়া অস্তিত্বটাও হয়তো শেষবারের মত মানুষ হবার চেষ্টা করছিলো প্রাণপণে, কিন্তু কোন প্রভাবক না থাকায় বারবার সেই আঁধারেই লুটিয়ে পড়ছিল । অস্তিত্বের ভেতর থেকে প্রতিনিয়ত একটা আওয়াজ বেড়িয়ে আসতে চাইছিল, কিন্তু শ্রাবণ কখনও ঠিক মত বুঝতে পারেনি সেই আওয়াজের তাৎপর্য । সেদিনের পর থেকে ঘুম হয়না ঠিক মত, বারবার ছুটে আসে অনিদ্রার পোকামাকড়; ঘুম হয়না একদম । মেঘলার সাথে কথা বললে স্বাভাবিক থাকে, অথচ অন্য সময় কেমন যেন হয়ে যায়; অনুভূতিগুলো পুরোপুরি অদেখা, অশ্রাব্য, অতীন্দ্রিয় । সবকিছুই ছিল মেঘলার অগোচরে । মেঘলা একদিন অনেকটা অধিকার নিয়েই প্রশ্ন করে বসলো যে কাকে নিয়ে শ্রাবণ এত প্রেমের কবিতা লেখে !! ভয়ে ভয়ে শ্রাবণ বলে দিলো সব কথা, রাত তখন ১২ টা ৩৬; শ্রাবণের মুখে এমন কথা শুনে মেঘলা একদম চুপ । এত নিশ্চুপ নীরবতায় রাত কাটতে না চাইলেও কেটে গেলো নির্ঘুম হয়ে । পাগলামি ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো, পৃথিবীর সমস্ত যুক্তি দিয়ে, শ্রাবণ নিজেকে বুঝতে লাগলো, ভালোবাসতে শিখলো । অথচ একসময় ভালোবাসার নাম শুনলে শ্রাবণ হাসাহাসি করতো; এসবের ওপর বিশ্বাস ছিল না একদম । নিজেকে অচেনা মনে হতো তার । সে যে সত্যিই মেঘলাকে ভালোবেসে ফেলেছে, তা বোঝাতে লাগলো । নিজেকে বোঝানোর পাঠ চুকিয়ে এখন মেঘলাকে বোঝানোর পালা । অথচ কী করলে বা বললে মেঘলা খুশি হবে তার কিছুই জানে না সে, তবুও চেষ্টা করে যেতে লাগলো । প্রথমদিকে মেঘলা কিছুটা বিব্রত বোধ করলেও ধীরে ধীরে বদলাতে থাকলো সব । শ্রাবণ বুঝতে পারলো তার মেঘলা হয়তো একদিন তাকে ভালোবাসবে, একদিন হয়তো কবিতার পাতা থেকে বাস্তবে ছুটে আসবে । মেঘলাও ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়লো শ্রাবণের প্রতি । প্রায় মাস খানেক পর এক রাতে আচমকা বলে দিলো তার সম্মতির কথা, ভালোবেসে ফেলার কথা ।
ফোন নম্বর নেয়ার পর পরদিন সকালে মেঘলার ফোন পেয়ে ঘুম ভেঙ্গেছিল, খুব অল্প সময়ের জন্য কথা হলেও এমন অনুভূতি কোনোদিন হয়নি শ্রাবণের । সবকিছুই যেন নতুন মনে হচ্ছিলো, কেমন যেন সুন্দের এক মহিমা চারপাশে । এত বছরে এই প্রথম তাকে কেউ এত যত্ন নিয়ে ঘুম ভাঙালো । ফুরফুরে মেজাজে শ্রাবণ অপেক্ষা করতে লাগলো মেঘলার ফোনের জন্য । ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরেই ফোন করলো মেঘলা । এক ঘণ্টার মত কথা হল দুজনের । প্রথম প্রেমের পদ্ম ফুটেছিল মেঘলার উঠোনে কিন্তু তার সুগন্ধ বয়ে বেড়াচ্ছিল শ্রাবণ । এভাবে প্রতিদিন কথা বলা শুরু হল ফোনে । রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হবার কারণে মেঘলা যখন তখন বাইরে বের হতে পারতো না । দুজনের মনের ভেতর যে প্রেম ছিল, তা বাতাসের মতই; শুধু অনুভব করা যায়, চোখে দেখা যায় না ।
গত কয়েক বছরে পয়লা বৈশাখে কোথাও যায়নি শ্রাবণ । এত মানুষের ভিড়ে যেতে ইচ্ছে করে না তার । মেঘলার সাথে কথা বলার সময় জানতে পারলো যে মেঘলা এবার টি,এস,সি যাবে । পরদিন পরীক্ষা থাকায় শ্রাবণকে যেতে মানা করে দেয় মেঘলা । শ্রাবণেরও এত ভিড়ের মাঝে যেতে ইচ্ছে করছিলো না । সম্মতি জানিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় শ্রাবণ । হালকা বৈশাখী বাতাস বইতে শুরু করেছে । কিছুক্ষণ বাইরে তাকিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়লো । ঘুম থেকে উঠেই শ্রাবণের ভেতর মেঘলাকে দেখার পাগলামি চেপে বসলো । এমন সুযোগ আর কবে পাবে জানেনা কেউ । আলমারি থেকে একটা পাঞ্জাবী আর পায়জামা বের করে দ্রুত তৈরি হয়ে নিলো । ছুটে গেলো মেঘলা কে একটু দেখার জন্য । মেঘলা কিছুই জানে না, সারপ্রাইজ দেবার জন্যই বলেনি শ্রাবণ । অথৈ কে ফোন করে জেনে নিলো কোথায় কিভাবে দেখা করবে । মেঘলার সাথে তার মা, চাচাতো ভাই আর চাচি থাকায় একটু দূর থেকেই দেখতে হবে, তবু খুশি শ্রাবণ; দেখতে তো পারবে ! মেঘলা আসার পর অথৈ এর পেছন পেছন ছুঁতে গেলো শ্রাবণ । হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে চোখ দুটো শুধু মেঘলাকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে । কিছুটা হেঁটে যাবার পর চোখের সামনে মেঘলাকে দেখতে পেলো, মেঘলা তখনও দেখেনি, জানেও না । মেঘলার সাথে ওর দুজন বান্ধবীও আছে, অনুভা আর মৃত্তিকা- তাদের সাথে আছেন তাদের মা । অথৈ মেঘলার কানে কানে বলতেই পেছনে ফিরে তাকালো । লাল শাড়িতে বেশ মানিয়েছে; অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্রাবণ । এমন বেহায়ার মত কোন মেয়ের দিকে তাকায়নি কোনদিন । মেঘলারও এক অবস্থা । সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে আড়চোখে একটু পর পর তাকাচ্ছে শ্রাবণের দিকে । হাতের আইসক্রিমটা গলে শাড়ির বারোটা বাজালো, দূর থেকে হাসছে শ্রাবণ । প্রায় আড়াই ঘণ্টা এভাবে দূর থেকেই চোখাচোখি হল দুজনের, কথা হয়নি । যাবার সময় টি,এস,সি থেকে পরীবাগ হেঁটে যাবার সময় সাহস করে শ্রাবণ মেঘলার পাশাপাশি এসে দাঁড়ালো; তবে কেউ টের পাবে তা ভেবে শ্রাবণ একটু দূরে সরে গেলো । এখনো দুজন পাশাপাশি হাঁটছে, শুধু দুজনের মাঝে রাস্তার ডিভাইডার । মেঘলাকে গাড়ি পর্যন্ত তুলে দিয়ে একটা রিকশা নিলো শ্রাবণ; মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে মেঘলা, উত্তর দিচ্ছে সে । রাতে কথা বলার সময় দুজনের মুখে হতাশার গ্লানি; ইশ ! প্রতিদিন যদি এভাবে দেখা হতো ! এই যুগের অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের মত স্বাধীনতা যদি পেতাম !
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে অজান্তেই শ্রাবণের চোখ দুটো ভিজে যায় । আজকাল বড্ড বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে যাচ্ছে সে । বারান্দায় দাড়িয়ে প্রায় প্রতিরাতেই কাঁদে আর মেঘলার কথা ভাবে । অথচ একসময় কেউ মরে গেলেও চোখ থেকে দু ফোঁটা জল পড়েনি শ্রাবণের । মেঘলার জন্য খুব কষ্ট হয় তার । মেয়েটা কেমন আছে, কী করছে কিছুই জানেনা সে । মনে পড়ে, একসময় মেঘলার প্রতিটা কাজের খোঁজ নিতো- মেঘলা ঠিক মত খেয়েছে কিনা, বাড়ি ফিরেছে কিনা- সব । রাত পেরিয়ে এখন ভোর ছুঁইছুঁই, চোখে এক বিন্দু ঘুম নেই শ্রাবণের । ভাবছে, হয়তো শহরের কোন এক প্রান্তে কেউ তার মত জেগে আছে ! একথা ভাবতেই অজানা ভয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে শ্রাবণের অশান্ত মন । এই ভয় অবিশ্বাসের নয় । কোন কোন ক্ষেত্রে ভয় থেকেও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হয় । মা যখন সন্তানকে হাঁটার জন্য প্রথমবারের মত ছেড়ে দেন, তখন তার মনেও ভয় থাকে; সেই ভয় অবিশ্বাসের নয়, সেই ভয় পড়ে যাবার, ব্যথা পাবার । মেঘলার জন্য শ্রাবণের মনেও তেমন ভয় জন্মানো শুরু করেছে । এসব নিয়ে মাথার ভেতর সারাদিন নানা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করে ।
মেঘলা শ্রাবণ
দ্বিতীয় পর্ব
--- creationofanunstablemind
দ্বিতীয় পর্ব
--- creationofanunstablemind
কিছুদিন ধরে অনুভার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না । বাসায় ধরা খাওয়ার পর অনুভার বাবা মোবাইল ফোন কোম্পানি থেকে অনুভা আর আরিয়ানের সব কল লিস্ট বের করেছেন । ফোন নিয়ে গেছেন ওর মা, যোগাযোগের কোন অবস্থা নেই । তাই, শ্রাবণ চাইলেও মেঘলার খোঁজ নিতে পারছে না । ওদিকে আরিয়ানের মানসিক অবস্থাও খুব একটা ভালো না । ছোট ছেলে, সবে মাত্র কলেজে উঠেছে; এতকিছু সহ্য করার ক্ষমতা ওর নেই, তাই কিছু হলেই শ্রাবণকে ফোন করে । নিজের কষ্ট গুলো বলতে পারে না আরিয়ান । শ্রাবণও চুপ করে থাকে, কী বলে বোঝাবে, জানেনা সে । যখন দুই হতভাগা একত্রে হয়, তখন ভাগ্যের গুণগান গাওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না । সেই কোন আমলে ভাগ্য একটু সহায় হয়েছিলো, সেটা নিয়েই শুরু হয় শ্রাবণ আর আরিয়ানের গুণগান । যদি ভাগ্য খুশি হয়ে একটু ফিরে তাকায়, এই আশায় । অনুভা আর আরিয়ানের সম্পর্ক টা শ্রাবণই করিয়ে দিয়েছিলো । যদিও অনুভা আর আরিয়ান দুজনেই দুজনকে পছন্দ করতো আগে থেকে । শ্রাবণের সাথে ওদের পরিচয় হয় মেঘলার সাথে স্মপ্ররক হবার পর । অনুভা মেঘলার সাথেই পড়ে, নয় বছরের বন্ধুত্ব ওদের । আর আরিয়ানও মেঘলার খুব ভালো বন্ধু । আরিয়ান আগে থেকেই অনুভা কে পছন্দ করতো তবে অনুভা বারবার ওকে ফিরিয়ে দেবার জন্য নানা কথা বলেছিল । এমন না যে অনুভা আরিয়ান কে ভালোবাসে না, অনুভা বাসায় সমস্যার কথা ভেবেই এসব বলতো । শ্রাবণ ব্যাপারটা জানতে পেরে ওদের মধ্যে সব ঠিক করে দেয় । নতুন জীবন শুরু হয় ওদের । একথা শুনে মেঘলা কতই না খুশি হয়েছিলো !
ভোর হয়ে গেছে প্রায়, শ্রাবণ এখনো বারান্দায় বসে আছে । আজও বোধ হয় ঘুম হবে না তার । একসময় নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমোতে হতো ওর, কিন্তু এখন কোন কিছুতেই কাজ হয় না । একটু আগেও ঘুমের ওষুধ খেয়েছে, তবু ঘুম আসছে না । মেঘলা আর অনুভার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হবার পর আরিয়ানের সাথেই শ্রাবণের কথা বেশি হয় । হয়তো দুজনেই আশা নিয়ে বসে থাকে যে এই বোধ হয় ভালোবাসার মানুষটির বেপারে কিছু জানতে পারবো; কোন না কোন খোঁজ হয়তো পেয়েছে । খোঁজ হয়তো অল্প কিছু পায়, ওটাই ভাগাভাগি করে নেয় দুজন । অথৈ এর কাছ থেকে খবর গুলো পাওয়া যায় । খবর গুলো শুনে তেমন কিছুই জানতে পারে না শ্রাবণ আর আরিয়ান । কারণ, ওই-প্রান্তের মানুষ দুটো শুধু আরিয়ান আর শ্রাবণের কথাই বলে, ভালো করে পড়াশোনা করতে বলে, সময়মত খেয়ে নিতে বলে । এসব শুনে মোবাইলের টাকা শেষ হলেও মনের পিপাসা শেষ হয় না । আর মনের পিপাসা তো কেবল ভালোবাসার মানুষই মেটাতে পারে ! তবুও অথৈ কে ধন্যবাদ জানায় শ্রাবণ, অন্তত কিছু তো জানা যাচ্ছে । সূর্য উঠে গেছে । শ্রাবণের সেদিকে কোন খেয়াল নেই, আনমনা হয়ে তাকিয়ে আছে বাইরে । এক সময় ভোর না হওয়া পর্যন্ত কথা হতো মেঘলার সাথে । দুজনেরই ভয়াবহ রোগ । মেঘলার কণ্ঠ না শুনলে শ্রাবণের ঘুম হয় না, আর মেঘলাকে ঘুম পাড়িয়ে না দিলে মেঘলা ঘুমোতে পারে না । গত কয়েক মাসের প্রতিদিনের এই কাজগুলো কবে যে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, তা জানা নেই ।
দু সপ্তাহ ধরে মেঘলার সাথে কথা হয়নি শ্রাবণের । দিনেও না, রাতেও না । একটু পর পর মোবাইল ফোনটা চেক করছে শ্রাবণ । নাহ ! আজও মেঘলার কোন ফোন আসেনি । শ্রাবণ ভাবতে থাকে, আচ্ছা মেঘলা কি জেগে আছে ? ওর ঘুম হচ্ছে তো ঠিক মত ? ও কিভাবে ঘুমোতে পারবে ? আজ তো ওকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হলো না ! মনে হয় মেয়েটা জেগে আছে, হয়তো বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে । নাহ ! মেঘলা কাঁদছে না হয়তো । ও জানে মেঘলার চোখের জল শ্রাবণের সহ্য হয় না একদম । মাথা কাজ করছে না শ্রাবণের । গত কয়েকদিনের নির্ঘুম চোখ আর প্রতিদিন নেয়া ঘুমের ওষুধের প্রভাব লেপটে আছে চোখে মুখে । ঝিম ধরে গেছে মাথাটা । শ্রাবণের মা নামাজ পড়ে কোরআন শরীফ পড়ছেন পাশের ঘরে । একটু পর বাবা বারান্দায় এসে শ্রাবণকে রেডি হতে বললেন । সকালে শ্রাবণ একাজ গুলোই করে । গাড়ি নিয়ে বের হয়, বোন কে স্কুলে নামিয়ে, বাবাকে অফিসে দিয়ে আসে । শ্রাবণ ঘরে ফেরার পর মা অফিসে যায় । শ্রাবণ হাতমুখ ধুয়ে তৈরি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায় । বাবা আর ছোট বোন কে নামিয়ে দিয়ে সংসদ ভবনের কাছে গাড়ি থামায় । আজকাল ঘুরতেও ভালো লাগে না, গাড়ি থেকে বের হয়ে দূর থেকে অন্য প্রেমিক-প্রেমিকাদের দেখে । মনে মনে ভাবে, এত সকালেও ওরা প্রেম করছে ! বাসায় কিছুই বলে না ওদের ! মোবাইলে বেজে ওঠে মায়ের ফোন । শ্রাবণের মা ডাক্তার, জরুরী অপারেশনের কথা বলে জলদি বাসায় ফিরতে বললেন তিনি । শ্রাবণ গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে গেলো । বাসায় ঢুকে দেখে সকাল নয়টা বেজে গেছে । শ্রাবণ চুপ করে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় । সারাদিনই পড়ে থাকে ঘরে, ক্লাস ও বন্ধ তাই বাইরেও বের হয় না এখন । মা দরজা নক করে ভিতরে ঢুকে নাস্তা দিয়ে যান; শ্রাবণের অবস্থা দেখে কিছুটা বিস্মিত হন । চুল গুলো বড় হয়ে গেছে, শেষ কবে শেভ করেছিলো সেটাও ভুলতে বসেছে শ্রাবণ । মা অফিসে চলে যাবার পর শ্রাবণ একটু ঘুমানোর চেষ্টা করে । শরীর আর পারছে না । বিছানায় শুয়ে আরিয়ান কে একটা ফোন করলো । নাহ ! ছেলেটা ফোন ধরলো না, হয়তো ঘুমোচ্ছে নাহয় কলেজে গেছে । আরিয়ানের জন্য খুব মায়া হয় শ্রাবণের । অনুভাকে প্রপোজ করার সময় কতই না লজ্জা পাচ্ছিলো ছেলেটা ! ছেলে মানুষের যে এত লজ্জা থাকে সেদিনই শ্রাবণ বুঝেছিল প্রথম । কত হাসাহাসি হয়েছিলো ওকে নিয়ে ! মেঘলা তো আরিয়ানের নাম দিয়েই ফেলেছিল "লাজুক লতা"; ছেলেটা এখন আর লাজুক নেই, মুখে চিরচেনা হাসিও নেই । কেমন যেন চুপসে গেছে । কেউ না বুঝলেও শ্রাবণ বোঝে লাজুক লতার মনেও এক বিন্দু পানির জন্য কত হাহাকার !
মাথাটা ভারি লাগছে । চোখের পাতাও মনের প্রতিকূলে চলে গেছে । চোখ বন্ধ হয়ে আসে শ্রাবণের; অশান্ত সে ঘুম.........।
মেঘলা শ্রাবণ
তৃতীয় পর্ব
---- creationofanunstablemind
তৃতীয় পর্ব
---- creationofanunstablemind
মাঝে মাঝে কিছু মানুষ এতটাই দূরে চলে যায়, যে তাদের অনুপস্থিতিও অনুভব করা যায় না । মেঘলা আর শ্রাবণের ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাপারটা ভিন্ন । শ্রাবণ ছাড়া মেঘলার আকাশ কতটা অসহায়, কতটা অপরিপূর্ণ তা কেবল ঐ চোখ নিংড়ানো অশ্রুই জানে । ঐ অশ্রুতে কষ্ট থাকে না, দুঃখ থাকে না; থাকে মিলনের প্রার্থনা । দূরত্বের বিশ্বাস এমনই হয়- কিছুটা অশ্রুর, কিছুটা আকুলতার ।
ঘুম থেকে উঠে খানিকটা সময় বিছানায় শুয়ে রইলো শ্রাবণ, শরীরটা ভালো নেই আজ । মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল মেঘলার কোন ম্যাসেজ এসেছে কিনা, আসেনি । আরিয়ানের দুটো মিসড কল দেখাচ্ছে অ্যান্ডরয়েড ফোনটায় । এই ফোনটা কেনার জন্য মেঘলা কতই না জোরাজুরি করেছিল ! শ্রাবণের পুরনো ফোনটা বদলানোর জন্য রীতিমত যুদ্ধে নেমেছিল মেঘলা । এ জমানার ছেলেদের হাতে নাকি ওসব মোবাইল মানায় না । কথাটা মনে পড়তেই মনে মনে হাসলো শ্রাবণ । দুপুর হয়ে গেছে, বিছানা ছেড়ে উঠে হাতমুখ ধুয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো ছোট বোন কে স্কুল থেকে আনতে । রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম, বিশ মিনিটের রাস্তা দেড় ঘণ্টায় পাড়ি দিয়ে বাসায় ফিরলো । ঘরে ঢুকেই শ্রাবণ গোসল করতে চলে গেলো । মা ফিরেছেন কিছুক্ষণ আগে, রান্না করছেন । গোসল থেকে বেরোবার পর দুবার রান্নাঘরে ঢুকেও বেড়িয়ে আসলো শ্রাবণ; কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না । চোখের নিচে কালো দাগ বসে গেছে কদিনেই । নিজের ঘরে চুপচাপ বসে আছে শ্রাবণ । স্কুল জীবনের বন্ধু মালিহার কথা মনে পরছে । ভাবছে, মালিহা থাকলে হয়তো কোন না কোন বুদ্ধি বের করে ফেলতো ! মালিহা আর পুলক জার্মানিতে থাকতো, দুজনেই শ্রাবণের খুব কাছের বন্ধু । ওদের সম্পর্কটাও শ্রাবণের নিজ হাতে গড়া । মালিহা মারা গেছে দুমাস হয়ে গেছে আর পুলক এখন পাগলপ্রায় । মেয়েটার লাশ পর্যন্ত দেখার সুযোগ হয়নি কারো । যেদিন রাতে মালিহার মৃত্যুর খবর জানতে পারলো, অনেক কেঁদেছিল শ্রাবণ । জীবনে প্রথমবার হয়তো কারো জন্য এভাবে কেঁদেছে সে । শ্রাবণের কান্না সেদিন মেঘলাও থামাতে পারেনি । মেঘলা, অনুভা, আরিয়ান, সাদ, তিয়াও কেঁদেছিল পাগলের মত । খুব অল্প সময়ে মেঘলা, অনুভা আর আরিয়ানকে আপন করে নিয়েছিল মেয়েটা । মারা যাবার কয়েক সপ্তাহ আগে একটা চিঠি লিখে গিয়েছিলো সবার জন্য । প্রত্যেকটা মানুষের বেপারে এক খুঁটিনাটি খবর হয়তো দেশে থেকে শ্রাবণও রাখতে পারেনি কোনদিন । প্রবীর দাদা কে বলেছিল বিয়ে করবার জন্য । দাদার বয়স প্রায় ছত্রিশ, এখনো বিয়ে করেনি । মালিহার খবর শুনে দাদাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন । শ্রাবণ কী করবে কিছুই বুঝতে পারছিলো না । সবাইকে বোঝাচ্ছে কিছুই হয়নি, সব ঠিক হয়ে যাবে । অথচ নিজেই একটু পর পর মালিহার নম্বরে কল করছে আর মেঘলাকে বলছে, "মালিহা ফোন ধরে না কেন ? হয়তো ব্যস্ত আছে এখন, একটু পর ঠিকই কল ব্যাক করবে" । এমন অবস্থা দেখে আরিয়ান কাঁদতে কাঁদতে ফোন বন্ধ করে দিলো, অনুভাও চুপ । সবাই একে একে ফোন কেটে দেবার পর মেঘলা আর শ্রাবণ সারারাত কথা বলেছে । মেঘলার জন্য নিজেকে কিছুটা শান্ত করেছে শ্রাবণ, নানা কথা বলে মেয়েটাকে বোঝাচ্ছে । কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে মেঘলা, শ্রাবণ জেগে থাকে ।
পরদিন মেঘলার কল পেয়ে ঘুম ভাঙে শ্রাবণের, গলার আওয়াজ কেমন যেন হয়ে গেছে । মালিহা মারা যাবার দিন মেঘলার সাথে দেখা করার কথা ছিল শ্রাবণের, অনুভা আর আরিয়ানেরও আসার কথা ছিল । বসুন্ধরা সিটিতে ঢুকে আরিয়ানকে দেখতে পায় শ্রাবণ । অনুভা এলেও মেঘলা আসতে পারেনি সেদিন । তাই মেঘলা ফোন করে বলল বিকেলে দেখা করতে, হয়তো শ্রাবণের মন কিছুটা ভালো করার চেষ্টায় ছিল মেয়েটা । দুপুরে তিয়া আর অথৈ গিয়েছিলো মেঘলার বাসায়, কান্নায় ভেঙে পড়েছিলো সবাই ।
তিয়ার সাথে মালিহার সম্পর্ক অনেকদিনের । তাই হয়তো শ্রাবণ আর মেঘলাকে দেখে রাখার সব দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলো ওর ওপর । বিকেলে প্রবীর দা, সাদ, স্কুলের বন্ধু অতনু কে নিয়ে মেঘলাকে দেখতে যায় শ্রাবণ । মেঘলার সাথে অথৈ আছে । দুজনার আজ প্রথম দেখা, অথচ দুজনের চোখে মুখে কান্নার ছাপ । ক্যাফেতে গিয়ে মেঘলাকে নিয়ে আলাদা হয়ে বসে শ্রাবণ । ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পেয়েও হাসতে পারেনি কেউ । শুধু চোখে চোখ রেখে তাকিয়েছিল একজন আরেকজনের দিকে । মেঘলার চোখে পানি আসতেই মুছে দেয় শ্রাবণ । ওকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে । শ্রাবণ বুঝতে পারে ও এমন থাকলে মেঘলার মনও খারাপ হয়ে যাবে । মেঘলার কান্না থেমে গেলে শ্রাবণ একগাল হেসে মেঘলার হাতদুটো নিজের হাতে জড়িয়ে নেয় । মেঘলার আঙুলে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে কথা বলে কিছুক্ষণ । দুজনেই অনেকটাই সামলে নিয়েছে নিজেকে । ওদের কষ্টগুলো যেন আর কেউ দূর করতে পারেনি । সেদিনই প্রথম প্রবীর দা, অতনু আর সাদের সাথে মেঘলার দেখা হয় । আধা ঘণ্টা একসাথে থেকে বিদায় নেয় অথৈ আর মেঘলা । সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, ফিরতে হবে বাকিদেরও । সবাইকে বিদায় দিয়ে রিক্সায় চেপে বসে শ্রাবণ, অতনু আর প্রবীর দা । বনশ্রী থেকে ধানমণ্ডি রিক্সায় যাবে সে । শ্রাবণের অদ্ভুত অভ্যাস গুলোর মধ্যে এই অভ্যাসটা একটু বেশিই অদ্ভুত বলে মনে করে সবাই । সারাজীবনে দুই থেকে তিন বার বাসে উঠেছে সে । রিক্সাতেই তার সব আনন্দ । বেইলি রোড পর্যন্ত গিয়ে জ্যামে বসে আছে, প্রবীর দা বলছেন মালিহার কথা । অতনুও কথা বলে যাচ্ছে । শ্রাবণ একদম চুপ । একটু পর পর মেঘলাকে ফোন দিচ্ছে । আবার ফোন দিচ্ছে অথৈ কে । অথৈ মেয়েটা শ্রাবণের খুব আপন, ওর কারণেই তো মেঘলার সাথে পরিচয় । রাত হয়ে যাচ্ছে, অথৈ ঠিকমত বাড়ি ফিরেছে কিনা সেটা জানার জন্যই ফোন দিয়েছে শ্রাবণ ।
তিয়ার সাথে মালিহার সম্পর্ক অনেকদিনের । তাই হয়তো শ্রাবণ আর মেঘলাকে দেখে রাখার সব দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলো ওর ওপর । বিকেলে প্রবীর দা, সাদ, স্কুলের বন্ধু অতনু কে নিয়ে মেঘলাকে দেখতে যায় শ্রাবণ । মেঘলার সাথে অথৈ আছে । দুজনার আজ প্রথম দেখা, অথচ দুজনের চোখে মুখে কান্নার ছাপ । ক্যাফেতে গিয়ে মেঘলাকে নিয়ে আলাদা হয়ে বসে শ্রাবণ । ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পেয়েও হাসতে পারেনি কেউ । শুধু চোখে চোখ রেখে তাকিয়েছিল একজন আরেকজনের দিকে । মেঘলার চোখে পানি আসতেই মুছে দেয় শ্রাবণ । ওকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে । শ্রাবণ বুঝতে পারে ও এমন থাকলে মেঘলার মনও খারাপ হয়ে যাবে । মেঘলার কান্না থেমে গেলে শ্রাবণ একগাল হেসে মেঘলার হাতদুটো নিজের হাতে জড়িয়ে নেয় । মেঘলার আঙুলে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে কথা বলে কিছুক্ষণ । দুজনেই অনেকটাই সামলে নিয়েছে নিজেকে । ওদের কষ্টগুলো যেন আর কেউ দূর করতে পারেনি । সেদিনই প্রথম প্রবীর দা, অতনু আর সাদের সাথে মেঘলার দেখা হয় । আধা ঘণ্টা একসাথে থেকে বিদায় নেয় অথৈ আর মেঘলা । সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, ফিরতে হবে বাকিদেরও । সবাইকে বিদায় দিয়ে রিক্সায় চেপে বসে শ্রাবণ, অতনু আর প্রবীর দা । বনশ্রী থেকে ধানমণ্ডি রিক্সায় যাবে সে । শ্রাবণের অদ্ভুত অভ্যাস গুলোর মধ্যে এই অভ্যাসটা একটু বেশিই অদ্ভুত বলে মনে করে সবাই । সারাজীবনে দুই থেকে তিন বার বাসে উঠেছে সে । রিক্সাতেই তার সব আনন্দ । বেইলি রোড পর্যন্ত গিয়ে জ্যামে বসে আছে, প্রবীর দা বলছেন মালিহার কথা । অতনুও কথা বলে যাচ্ছে । শ্রাবণ একদম চুপ । একটু পর পর মেঘলাকে ফোন দিচ্ছে । আবার ফোন দিচ্ছে অথৈ কে । অথৈ মেয়েটা শ্রাবণের খুব আপন, ওর কারণেই তো মেঘলার সাথে পরিচয় । রাত হয়ে যাচ্ছে, অথৈ ঠিকমত বাড়ি ফিরেছে কিনা সেটা জানার জন্যই ফোন দিয়েছে শ্রাবণ ।
পরীবাগ পার হবার পর প্রবীর দা আর অতনুর সাথে বাড়ি ফিরেছিল কিনা এখন ঠিক মনে করতে পারছে না শ্রাবণ । শুধু মনে আছে রাতে মেঘলার সাথে কথা হয়েছিলো অনেক । পুলকের খবর নেয়ার চেষ্টা করেছিলো শ্রাবণ কিন্তু কোন খোঁজ পাচ্ছিলো না ।
হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে ভাবনার রেশ কেটে গেলো শ্রাবণের । মা খাবার দিয়ে গেছেন, কখন ঠাণ্ডা হয়ে গেছে কে জানে ! বেশ আনমনা হয়ে গেছে, কিসের যেন একটা হাহাকার ঘরজুড়ে ।
(হয়তবা চলবে, পরবর্তী লেখা কবে লিখবো ঠিক বলতে পারছি না। হয়তো কাল অথবা পরশু, হয়তোবা কখনই না।)
হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে ভাবনার রেশ কেটে গেলো শ্রাবণের । মা খাবার দিয়ে গেছেন, কখন ঠাণ্ডা হয়ে গেছে কে জানে ! বেশ আনমনা হয়ে গেছে, কিসের যেন একটা হাহাকার ঘরজুড়ে ।
(হয়তবা চলবে, পরবর্তী লেখা কবে লিখবো ঠিক বলতে পারছি না। হয়তো কাল অথবা পরশু, হয়তোবা কখনই না।)
No comments:
Post a Comment