Monday, October 21, 2013

পোকা-জীবন


অনেকবার পড়া কোন প্রিয় বই হাতে নিলে একটা অবাক করা অনুভূতি হয়, প্রতিবারই বইটা যেন একটু বেশি ভারি, একটু বেশি মোটা-সোটা লাগে! যেন প্রতিটি পাঠে পাতার ভাঁজে ভাঁজে কিছু একটা জমা হতে থাকে, একটু অনুভব, খানিকটা ভাবনা, একটু খানি শব্দ, গন্ধ, চেনা কোন রঙ। অনেক বছর পর বইটা খুললে ভারি মিষ্টি একটা চমক লাগে, দেখা যায় বইটার পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছি আমি; তরুণতর, খানিকটা অচেনা ঠিকই, কিন্তু আমিই যে তাতে কোন সন্দেহ নেই; ঠিক যেন বইয়ের পাতার মাঝে শুকিয়ে থাকা ফুল, - অচেনা, আবার দারুণ চেনা, দারুণ আপন!

উপরের কথাগুলো আমারই, যদিও আমার আগেই বলে ফেলেছেন প্রিয় লেখিকা কর্নেলিয়া ফাঙ্কে (থিফলর্ড, ইঙ্কস্পেল ট্রিলজির লেখিকা) বিপদই বটে, এই যে, নিজের কথাগুলো কেবলই দেখি অন্য কেউ বলে ফেলেছেন, এটা বইপোকাদের অতি পরিচিত সিন্ড্রোম, আমি বলি 'হবু-গবু সিন্ড্রোম', সংক্ষেপে 'হগ সিন্ড্রোম'; যে, "আমারও ছিলো মনে, কেমনে ব্যাটা পেরেছে সেটা জানতে!" এর হাত থেকে বাঁচোয়া নেই; কারণটা সোজা, অল রাইটার্স আর বইপোকা, বাট অল বইপোকা আর নট রাইটার্স! সুতরাং আমাদের মতোন পোকাদের এই সিন্ড্রোমের হাত থেকে মুক্তি নেই!

পূরাণের দেবতাদের অমৃত তুলতে ম্যালা নাকানি চুবানি খেতে হয়েছিলো, বিশাল মৈণাক পর্বতকে বাসুকী নাগের ফনা দিয়ে পেঁচিয়ে জাম্বো সাইজের একটা ঘুটনি বানিয়ে 'দে ঘুটা, দে ঘুটা' বলে সমুদ্রে ঘুটা দিতে হয়েছিলো। তাতে উঠেছিলো অমিয়, সঙ্গে গরলও; বিরাট ক্যাচাল, নীলকণ্ঠ বাবাজী থাকাতে তাও রক্ষা! আমরা দেবতাদের তুলনায় কী ভালোই না আছি! স্মৃতির সাগরে ঘুটা দিতে মৈণাক লাগে না, একটা পূরানো বই হলেই চলে; ভেসে ভেসে উঠতে থাকে কত কত রূপ, রঙ, স্বাদ, গন্ধ! গরলেরও ভয় নেই, স্মৃতির রসায়নটাই এমন, তিক্ততা, যন্ত্রণা, বেদনা ইত্যাদির উপর ছড়িয়ে দেয় অলীক মলম, এমনই তার ধাক, ব্যথা-বেদনাও নাম-ধাম পাল্টে অমিয়ের দলে নাম লেখায়!

একটা বই যেমন ধাঁ করে আপনাকে পিছিয়ে দূর অতীতে নিয়ে গিয়ে রঙ, গন্ধ আর স্বাদের ফাঁদে ফেলে ঘুঘু দেখিয়ে দিতে পারে, হঠাৎ কোন রঙ, স্বাদ কি গন্ধও আবার মাথায় চাঁটি মেরে মনে পড়িয়ে দিতে পারে বিশেষ কোন বইয়ের কথা! এই রকম কিছু বইয়ের কথা বলি, যেগুলোতে ছড়িয়ে আছে আমার শৈশব

শুরুতেই রবিবুড়োর শরণ নিতে হয়, 'ছড়া' বইটার সঙ্গে মিশে আছে কত স্মৃতি!

"কদমাগঞ্জ উজাড় করে আসছিলো মাল মালদহে
চড়ায় পড়ে নৌকাডুবি হলো যখন কালদহে,
তলিয়ে গেলো অগাধ জলে বস্তা বস্তা কদমা যে
পাঁচমোহনার কৎলু ঘাটে ব্রহ্মপুত্র নদ মাঝে।
আসামেতে সদকি জেলায় হাংলু-ফিড়াং পর্বতের
তলায় তলায় কদিন ধরে বইলো ধারা শরবতের।"

কিংবা 'শিশু ভোলানাথ',

"নেই বা হলাম আমি তোমার অম্বিকে গোঁসাই।
আমি তো মা চাইনে হতে পণ্ডিত মশাই।
নাই যদি হই ভালো ছেলে
কেবল যদি বেড়াই খেলে
তুঁতের ডালে খুঁজে বেড়াই গুটিপোকার গুটি,
মুর্খু হয়ে রইবো তবে?
আমার তাতে কীই বা হবে,
মুর্খু যারা তাদেরই তো সমস্তক্ষণ ছুটি!"

পড়লেই, অথবা শুনলেই, কিংবা ভাবলেই পায়ের তলায় যেন লেপা মাটির স্পর্শ পাই, বাঁশের চটার বেড়ার ফাঁকে খেলে বেড়ায় দুষ্টু হাওয়া, বাইরে থেকে ডেকে যায় কী দারুণ রহস্যে ছাওয়া বন-বাদাড়, কেরোসিন লণ্ঠনের শিখা দপদপিয়ে উঠে, যেন আমারই মতোন, ছুট্টে বেরিয়ে যেতে চায়! চোখের সামনে ভেসে ওঠে বই দুটোর ছবি, হালকা হলদে রঙা মলাট, গাঢ় মেরুনে লেখা বইয়ের নাম, তলায় রবিবুড়োর সেই চেনা সই! খুব সম্ভব বিশ্বভারতী থেকে বেরোতো বইগুলো। - রবিবুড়োর কাছে ফিরে ফিরে যাই, যেতেই থাকবো আমৃত্যু!

'ইঁচড়ে পক্ক' কথাটা সম্ভবতঃ আমার কথা মনে করেই কয়েন করেছিলো কেউ! নয় বছর বয়সে আমার প্রথম লাইব্রেরির সঙ্গে পরিচয়। তার আগের যাবতীয় সখ্যতা বাবা-মায়ের সংগ্রহের সাথে, আর তাঁদের কিনে দেয়া বইগুলোর সাথে। বয়সেই মনোজ বসুর 'নিশিকুটুম্ব', সুবোধ ঘোষের 'শুন বরনারী', সৈয়দ মুজতবা আলীর 'টুনি মেম', বিমল করের 'খড়কুটো'তে দাঁত ফোটানোর চেষ্টা চালিয়ে ফেলেছি, খুব ধস্তাধস্তি চলছে প্রমথ নাথ বিশীর 'লাল কেল্লা' আর সতীনাথ ভাদুড়ীর 'সত্যি ভ্রমণ কাহিনী' আর 'গণনায়ক' এর সঙ্গে, প্যারীচাঁদ মিত্রের 'আলালের ঘরের দুলাল' এবং যাযাবরের 'দৃষ্টিপাত' ঠেলা-ধাক্কা দিচ্ছে মাঝে মাঝে। এমনি সময় বাবা কিনে দিলেন 'দাদু নাতির দৌড়'; শিব্রাম চকরবরতি আমার জীবনে এলেন, দেখলেন, জয় করলেন! আজ এতোগুলো বছর বাদেও যখনই কেউ 'পান' করে, কথা নিয়ে খেলে, 'দাদু নাতির দৌড়' ভেসে ওঠে চোখের সামনে! শিব্রাম ছাড়া কেই বা আর অমন করে বলতে পারেন, "তুমি চা খাও বা না খাও, আমাকে তো চাখাও!" কেই বা শ্রীমতির বিশ্রী মতি নিয়ে রসের ভিয়েন সাজাতে পারেন অমন!

তো, নয় বছর বয়সে লাইব্রেরির সদস্য হওয়া। ময়মনসিংহে, ইউ এস আই এস, আমরা হড়বড় করে বলতাম ইউসিস। সেইখানে পরিচয় লরা ইঙ্গলস ওয়াইল্ডারের সঙ্গে। আর সে কী পরিচয়, আঠার মতোন সেঁটে গেলেন মহিলা আমার জীবনের সঙ্গে! অনবদ্য অনুবাদে একে একে পড়ে গেছি 'খোকা-খুকুর গল্প শোন', 'ঘাসের বনে ছোট্ট কুটীর', নদীর তীরে ফুলের মেলা', 'রূপালী হ্রদের তীরে', 'তেপান্তরে ছোট্ট শহর', 'শীত নেমেছে মাঠে মাঠে', 'সোনা রঙের দিনগুলি', 'এক যে ছিলো চাষীর ছেলে'! আহা, কী মধুর সব সময় কেটেছে এঁর সঙ্গে! কতবার যে পড়েছি এক একটা বই! এখনও পড়ি। অনুবাদ আর হাতের কাছে নেই, মূল বইগুলোই পড়ি, বার বার! আর, পড়তে গেলেই মনে হয় বসে আছি লাল সিমেন্টে বাঁধানো শীতল বারান্দায়, পাশেই বাটিতে কুরবানির ঝুরো মাংস আর চালের আটার রুটি! হাহাহা! কোথায় আমেরিকার বুনো পশ্চিম, আর কোথায় মাংস-রুটি, আর পণ্ডিতপাড়ার এক ছোট্ট বাড়ীর ছোট্ট লাল বারান্দা! স্মৃতি এমনই জাদু জানে!

ইউসিসের মাধ্যমেই পরিচয় টম সয়্যার আর হাকলবেরি ফিনের সঙ্গেও। এগুলোও অসংখ্যবার পড়া! অতি প্রিয় আর একজনকেও পাই এইখানেই, জ্যাক লন্ডন! 'দ্য সি উলফ', 'কল অফ দ্য ওয়াইল্ড', 'হোয়াইট ফ্যাঙ'! বাক এবং হোয়াইট ফ্যাঙ, চারপেয়ে কোন প্রাণীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া যে সম্ভব সেটা জ্যাক লন্ডন না পড়লে জানাই হতো না! কে যেন বলেছেন না, সম্ভবতঃ রবার্ট ফ্রস্টই হবেন, "No tears in the writer, no tears in the reader. No surprise in the writer, no surprise in the reader!" জ্যাক লন্ডন কাঁদিয়েছেন, চমকে দিয়েছেন! কচি কাঁচা পত্রিকায় কার যেন অনুবাদে 'টু বিল্ড ফায়ার' পড়ে অঝোরে কেঁদেছি, মনে পড়ে!

মনে পড়ছে 'মবি ডিক', একঠেঙে ক্যাপ্টেন আহাবকে ভুলতে পারি না! 'ট্রেজার আইল্যান্ড' মনে পড়ে!

ফতেহ লোহানির করা একটা অনুবাদ পড়েছিলাম, 'সমুদ্র সম্ভোগ' নাম ছিলো সম্ভবতঃ। 'দ্য ওল্ড ম্যান এ্যান্ড দ্য সি' এর অনুবাদ। এটাও কাঁদিয়ে দিয়েছিলো! বড় হয়ে মূলটা পড়া হয়েছে অনেকবার, কিন্তু অনেক খুঁজেও সেই অনুবাদটি আর পাইনি! পড়তে ইচ্ছে করে!

কচি কাঁচার কথা বলছিলাম একটু আগেই। পত্রিকাটিও ছিলো সোনার খনি! 'রায়হানের রাজহাঁস' পড়েছিলাম, আবু কায়সারের। পড়েছিলাম 'দিলুর গল্প', রাহাত খানের অসাধারণ সৃষ্টি! শাহজাহান ভাইয়ের কথা ভোলা যায় না! এখনও মনে আছে ওঁর বলা 'চল্টা মল্টা তল্টা হুঙ্কার' (চমৎকার), কিংবা 'পাপাঝা' (পাজীর পা ঝাড়া)!

তো, ইউসিসে মোটামুটি বুঁদ হয়ে আছি, এমন সময় আমার মেজো মামা আমাকে উপহার দিলেন একটা রাশান বই। আনাতোলি রিবাকভের লেখা, ননী ভৌমিকের অনুবাদ, নাম 'ছোরা'! সেই ছোরা ঘ্যাঁচ করে গেঁথে গেলো সোজা হৃৎপিণ্ডে! ওরে সে কী বই রে! মাৎ হয়ে গেলাম! মিশা, গেঙ্কা আর স্লাভার সঙ্গে ঘুরে ফিরতে লাগলাম মস্কোর রাস্তায় রাস্তায়, নিকিৎস্কি ডাকাতকে কব্জা না করলেই নয়, পলেভোয় এর জাহাজী ছোরাটাও তো উদ্ধার করতে হবে! - বিশাল আরেকটা জগতের দরোজা খুলে গেলো আমার সামনে! একে একে চললো পড়া, 'অমল ধবল পাল', 'ইস্পাত', 'মানুষের মতো মানুষ', 'পিতাপুত্র', 'বাবা যখন ছোট', 'তিয়াপা বরকা আর রকেট', 'রূপের ডালি খেলা', 'হৈটি টৈটি', 'উভচর মানুষ', 'আমার ছেলেবেলা', 'পৃথিবীর পথে', 'পৃথিবীর পাঠশালায়', 'তিমুর তার দলবল', আরও কত! - অন্য অনেকের মতো আমারও সায়েন্স ফিকশনের সঙ্গে পরিচয় আলেক্জান্ডার বেলায়েভের 'উভচর মানুষ' বইটি দিয়েই। ওফ, সেই মুগ্ধতার তুলনা হয় না! আজও হাতে বেলা রুটি খেতে গেলে মনে পড়ে 'তিমুর তার দলবল'! সেই কবে, রুটিতে মাখন লাগিয়ে রোল করে ছাদের নির্জনতায় বসে বসে পড়েছিলাম, স্মৃতিতে সেই রুটি-মাখনের গন্ধ!

সত্তরের শুরুতে বাবা ময়মনসিংহ থেকে বদলি হয়ে গেলেন মৌলভিবাজার এটি তখন সিলেট জেলার একটা মহকুমা ছিলো। এখানে এসেই বাবা করলেন কী, এমনকি স্কুলে ভর্তি হবারও আগে, আমাদের দুই ভাইবোনকে পাবলিক লাইব্রেরির মেম্বার করে দিলেন। লাইব্রেরি তো নয়, স্বর্গ! হীরের খনি বললেও কমই বলা হয়! এখানেই আবিষ্কার করলাম এক আলমারি জোড়া দেব সাহিত্য কুটীরের পূজা সংকলন। ঘনাদা এলেন জীবনে ঢাকঢোল বাজিয়ে! পরিচয় হলো দুই নারায়নের সঙ্গে, দেবনাথ আর গঙ্গোপাধ্যায়। একজন চেনালেন 'নন্টে আর ফন্টে'কে, অন্যজন পরিচয় করালেন চারমূর্তির সঙ্গে, আমার জীবনে এলেন টেনিদা! হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনের মতো ঘনাদা-টেনিদা আমার জীবনটাকে কত যে মধুর করেছেন সে শুধু আমিই জানি!

এই খানেই চেনা-জানা হলো মণিশংকর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে, সবাই যাঁকে শংকর নামে চিনি। গোগ্রাসে গিললাম তাঁর 'কত অজানারে', 'চৌরঙ্গী', 'নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবোরেটরি' নিবেদিতার জীমূতবাহন, ঈশিতা, মদালসা এখনও স্মৃতিতে উজ্জল!

কিছু সিরিজ বই বাবা-মা আনাতেন, মনে পড়ে। 'রম্যাণী বীক্ষ্য' নামে একটা ভ্রমণ সিরিজ ছিলো, লেখক সম্ভবত সুবোধ চক্রবর্তী। এখন পেলে আবার পড়তাম! অবধূতের 'উদ্ধারণপূরের ঘাট', 'মরুতীর্থ হিংলাজ', 'মহাপ্রস্থানের পথে' পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম, মনে পড়ে।

মনে পড়ে বনফুল! 'হাটে বাজারে', 'স্থাবর', 'ভূবন সোম' পড়ার কথা মনে করতে পারি

জিম করবেট আর কেনেথ এন্ডারসনের লোমহর্ষক শিকার কাহিনীর সঙ্গে পরিচয়ও আমার এই সময়টাতে। আমার খুব প্রিয় একটা স্মৃতি এই রকম: বাইরে মফস্বলের রাত, নিশুতি হতে সময় লাগে না! বৃষ্টি, জোর হাওয়াতে বিদ্যুত গেছে! হ্যারিকেন লণ্ঠন সামনে নিয়ে বসেছি আমরা দুই ভাই বোন, বাবা পড়ে শোনাচ্ছেন 'ম্যান ইটার্স অফ কুমায়ুন' অথবা 'লেপার্ডস অফ রূদ্রপ্রয়াগ' ইংরেজী থেকে সরাসরি অনুবাদ করে শোনাচ্ছেন, সারা গায়ে শিহরণ নিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছি আমরা। পাশে কেরোসিন স্টোভে খিচুড়ি-ডিমভাজি নিয়ে ব্যস্ত মায়ের কানও গল্পের দিকে! রাত বাড়তে বাড়তে গভীর হয়ে যাচ্ছে, আমরা খিদে টিদে ভুলে গল্পই শুনে যাচ্ছি! আহা, কী যাদুকরী সব সময় গেছে!

দস্যুদের পাল্লায় পড়ার কথাটুকু না বললে শৈশবের কথা অপূর্ণ থাকবে! পাবলিক লাইব্রেরিতেই খোঁজ পেয়েছিলাম স্বপন কুমার সিরিজের, খুব একটা জুত লাগতো না! আবুল কাশেমের লেখা 'দস্যু বাহরাম', রোমেনা আফাজের 'দস্যু বনহুর' খুব পড়তাম! খুব পড়তাম শশধর দত্তের 'দস্যু মোহন'! খুব উত্তেজনা হতো যখন মোহনকে ঘিরে ধরতো পুলিশ, "কিন্তু কী হইতে কী হইলো, পুলিশের হাতের পিস্তল এখন মোহনের হাতে" পড়ে খুব শান্তি লাগতো! 'কুয়াশা' সিরিজের ভক্ত ছিলাম খুবই! শহীদ-মহুয়া, কামাল, কুয়াশ স্বয়ং, এবং রসিক ডি কস্টা খুবই প্রিয় ছিলো!

আগেই বলেছি, ইঁচড় খুবই পক্ক ছিলো! মাসুদ রানার সঙ্গে তাই পরিচয় সেই বালক বয়সেই! মাসুদ রানার সঙ্গে নোনতা বিস্কুট, চানাচুর আর হরলিক্সের গন্ধ কি করে গিয়ে মিশলো, সেই কথাই বরং বলি! আমাদের প্রতিবেশি একটি নবদম্পতি ছিলেন, ভদ্রলোক বাবার সহকর্মী। মফস্বল শহরে বিনোদন বলতে তো সিনেমা, মাঝে মাঝে যেতেন দুজনে। ওঁদের তখনও ছেলেমেয়ে না হওয়াতেই মনে হয়, আমার ভেজা-বেড়াল মুখোশের ধাঁধায় ধরা পড়েছিলেন ওঁরা, খুব শান্তশিষ্ট মনে করে আমাকে বাড়ী পাহারায় রেখে যেতেন। একবার এরকম গেলেন, যাওয়ার আগে আমাকে এক থালা নোনতা বিস্কুট, ইয়া সাইজের এক গ্লাস হরলিক্স এবং আলমারির কোন কোণায় চানাচুরের ডিব্বা আছে সেই ঠিকানা বলে টলে ওঁরা গেলেন সিনেমায়। আমি বসে বসে বোর হচ্ছি, ড্রেসিং টেবিলের সব ড্রয়ারের সব রহস্য ভেদ করা সারা, হঠাৎ বেডসাইড টেবিলের দেরাজ খুলতেই খেলাম চমক! মাসুদ রানা স্বয়ং! 'সাগর সঙ্গম - '! কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য! কান টান গরম হয়ে গেলো! এক নিশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম সে বই! সেই প্রথম! - সেই যাত্রা এখনও চলছে দুর্বার গতিতে! এখনও মাসুদ রানা পড়তে গেলে জিভে নোনতা বিস্কুট, চানাচুর আর হরলিক্সের স্বাদ পাই! হাহাহা! আমি তো এমনি এমনিই খাই!

 


No comments:

Post a Comment