আমার দেখা সবচে মোহনীয় চলচ্চিত্রটির নাম ‘পারফিউমঃ দ্য স্টোরী অফ আ মার্ডারার’ । পরিচালক টম টিকওয়ের ।
গল্পটি একজন সিরিয়াল কিলারের গল্প । যদিও ছবি দেখা শেষে আপনি তাকে ‘কিলার’ না বলে বরং ‘শিল্পী’ বলে বসতে পারেন । তার ‘হত্যাকান্ড’ গুলো গৌন মনে হতেই পারে আপনার কাছে । শিল্পবোধের নীচে চাপা পরে গেছে খুনীর ক্রূঢ়তা ।
অস্ত্রগুরু দ্রোন একবার পঞ্চপান্ডবকে একটি তীর নিক্ষেপের প্রতীযোগীতায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন । তিনি মৃত্তিকানির্মিত একটি পাখিকে গাছের ওপর বসিয়ে দিলেন । পঞ্চপান্ডবকে পাখিটির ধর থেকে মাথা আলাদা করে ফেলতে বলা হলো । দ্রোন যুধিষ্ঠিরকে ধনুক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ঐ গাছটি এবং তার ওপরে বসানো মাটির পাখিটিকে দেখতে পাচ্ছো ?’
‘হ্যাঁ’, যুধিষ্ঠিরের উত্তর ।
‘আমাকে আর তোমার ভাইদেরকেও দেখছো ?’
‘হ্যাঁ’
দ্রোন বিরক্ত মুখে তাঁর হাত থেকে ধনুক কেড়ে নিয়ে বললেন, ‘তোমাকে দিয়ে হবে না । চলে যাও ।’
এক এক করে সবাইকে একই প্রশ্ন করা হলো । সবাই একই উত্তর দিলেন কেবল অর্জুন বাদে । অর্জুনকে দ্রোন বললেন, ‘ঐ গাছটি এবং তার ওপরে বসানো মাটির পাখিটিকে দেখতে পাচ্ছো ?’
‘আমি শুধু পাখিটিকে দেখতে পাচ্ছি ।’
‘আবার বলো ।’
‘আমি শুধু পাখিটির মাথা দেখতে পাচ্ছি ।’
দ্রোন আনন্দিত হয়ে অর্জুনকে তীর নিক্ষেপের অনুমতি দিলেন । অর্জুন শর নিক্ষেপের মাধ্যমে পাখিটির শিরোচ্ছেদ করলেন ।
‘হ্যাঁ’, যুধিষ্ঠিরের উত্তর ।
‘আমাকে আর তোমার ভাইদেরকেও দেখছো ?’
‘হ্যাঁ’
দ্রোন বিরক্ত মুখে তাঁর হাত থেকে ধনুক কেড়ে নিয়ে বললেন, ‘তোমাকে দিয়ে হবে না । চলে যাও ।’
এক এক করে সবাইকে একই প্রশ্ন করা হলো । সবাই একই উত্তর দিলেন কেবল অর্জুন বাদে । অর্জুনকে দ্রোন বললেন, ‘ঐ গাছটি এবং তার ওপরে বসানো মাটির পাখিটিকে দেখতে পাচ্ছো ?’
‘আমি শুধু পাখিটিকে দেখতে পাচ্ছি ।’
‘আবার বলো ।’
‘আমি শুধু পাখিটির মাথা দেখতে পাচ্ছি ।’
দ্রোন আনন্দিত হয়ে অর্জুনকে তীর নিক্ষেপের অনুমতি দিলেন । অর্জুন শর নিক্ষেপের মাধ্যমে পাখিটির শিরোচ্ছেদ করলেন ।
পারফিউমের সমস্ত কাহিনী জুড়ে এমন এক খুনীর গল্প বর্ণিত হয়েছে যে তার চোখের সামনে কেবল তার ‘লক্ষ্য’কে দেখতে পেয়েছে । কি সেই লক্ষ্য ? একটি স্বর্গীয় সুগন্ধী তৈরী করা । একটি ‘পারফিউম’ সৃষ্টি করা যা মানুষকে অন্য জগতে নিয়ে যেতে পারবে । যে সুগন্ধী দিয়ে সমস্ত পৃথিবী জয় করা সম্ভব ।
চলচ্চিত্রের শুরুতেই জিন ব্যাপটিস্ট গ্রীনোয়েল নামের এই খুনীকে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে কারাগারে প্রেরন করা হয় । রায় ঘোষনা এবং ফাঁসি কার্যকর করার মধ্যবর্তী সময়টাতে গ্রীনোইলের জীবন কাহিনী ছবিতে অপূর্বভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে ।
(গ্রীনোয়েল চরিত্রে অভিনয় করেছেন বেন হুই শ')
গ্রীনোয়েলে জন্ম হয় একটি ফরাসী মাছের বাজারে । জন্মের পরপরই তার মা তাকে আবর্জনার মধ্যে ফেলে দেয় । এই অপরাধে সে গ্রেপ্তার হয় ।
‘জন্মের পর মাকে খাওয়া’ বলতে যা বোঝায় গ্রীনোয়েলের ক্ষেত্রে তাই ঘটে । এরপর তার কৈশোর, যৌবন এভাবেই একের পর এক ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত হত্যাকান্ডে জড়িয়ে এগোয় ।
গ্রীনোয়েল পৃথিবীর সবচে প্রখর অলফ্যাক্টরী সেন্সের অধিকারী ব্যক্তি । বিজ্ঞানের ভাষায়, অলফ্যাকশন না অলফ্যাক্টরী পারসেপশন মস্তিষ্কে ঘ্রানের অনুভূতি জাগায় । গ্রীনোয়েলের ঘ্রান ইন্দ্রীয় ছিল কীংবদন্তী ।
জনৈক বালদিনির কাছে সে ‘সুগন্ধী তৈরী ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া’র বিষয়ে শিক্ষালাভ করে । বালদিনি তাকে বলে, সব ধরনের গন্ধই মৌলিক ১২টি গন্ধের সমন্বয়ে তৈরী । ত্রয়োদশ আরেকটি মৌলিক গন্ধের মাধ্যমে নতুন কোন অলৌকিক গন্ধ তৈরী করা হয়তো সম্ভব ।
বালদিনি তাঁকে নতুন সুগন্ধি তৈরীর ব্যাপারে খুব একটা সহায়তা করতে না পারলেও গ্রাসের ঠিকানা দিতে সমর্থ হয় । যেখানে গেলে গ্রীনোয়েল নতুন কিছু শিখতে পারবে ।
গ্রাসে পৌঁছেই গ্রীনোয়েল তাঁর ‘থার্টিন্থ স্মেল’ আবিষ্কার করে । এটি ছিল ‘লরা রিচিস’ নামের এক তরুনীর গায়ের গন্ধ । লরা চরিত্রে ছবিটিতে অনবদ্য অভিনয় করেছে রাচেল ক্লেয়ার হার্ডউড ।
গ্রীনোয়েল ম্যাডাম আরনুলফি নাম্নী এক মহিলার কাছে কাজ জুটিয়ে নেয় । তার কাছ থেকেই সে ‘এনফ্লিউরেজ’ পদ্ধতি শিখে নেয় । এ পদ্ধতির মাধ্যমে মানুষের শরীরের গন্ধের মৌলিক উপাদানগুলোকে সংরক্ষণ করা সম্ভব । গ্রীনোয়েল বেছে বেছে তার পছন্দমত গন্ধের মানুষদের হত্যা করে । ভিকটিমদের দৈহিক গন্ধকে সংরক্ষন করার জন্য মৃতদেহকে বিশাল কাচের জারে বন্দী করে এনফ্লিউরেজ প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে ।
শহরে হাহাকার পড়ে যায় । বিভিন্ন জায়গাতে তরুনীদের লাশ মিলতে থাকে । আর একই সাথে গ্রীনোয়েল তার সাফল্যের সিঁড়িতে এক এক ধাপ আরোহিত হতে থাকে ।
আর বেশী কিছু না বলি । ছবিটি দেখে বাকীটা জানাই শ্রেয় । শুধু শেষটুকু বলবো । অলৌকিক পারফিউমটি তৈরী হয়েছিল । আর এর বদৌলতেই ফাঁসির দড়ি থেকে রক্ষা পায় গ্রীনোয়েল ...
আর বেশী কিছু না বলি । ছবিটি দেখে বাকীটা জানাই শ্রেয় । শুধু শেষটুকু বলবো । অলৌকিক পারফিউমটি তৈরী হয়েছিল । আর এর বদৌলতেই ফাঁসির দড়ি থেকে রক্ষা পায় গ্রীনোয়েল ...
ছবির চিত্রনাট্যটি তৈরী করা হয়েছে পেট্রিক সাসকিন্ডের লেখা ১৯৮৫ সালের বেস্টসেলার উপন্যাস ‘পারফিউম’ অবলম্বনে । স্পেন, জার্মানী ও ফ্রান্সের বিভিন্ন জায়গাকে প্লট করে নির্মিত এই ছায়াছবিতে খরচ হয়েছে ৫০ মিলিয়ন । আর বিশ্বব্যাপী ছবিটি আয় করেছে ১৩৫ মিলিয়ন । যার ৫৩ মিলিয়ন জার্মানী থেকে ।
No comments:
Post a Comment