Friday, November 15, 2013

সদ্য পড়া বইঃ Jamilia ( A wonderful love story)

By - Chingiz aitmatov

জামিলা ! নাকি জামিলিয়া ! সঠিক উচ্চারণ আমার জানা নেই  রুশ ভাষা জানা এক ফেসবুক বন্ধু জানালো ওটা জামিলাই হবে ! কিরগিয লেখক চিঙ্গিয আইতমাতভের এক অবিস্মরণীয় চরিত্র জামিলা  লেখায় জাদুর কথা অনেক শুনেছি  দেখেছিও  কিন্তু জামিলা পড়ে যাকে বলে আমি স্পেলবাউন্ড  মন্ত্রমুগ্ধতা কাকে বলে হাড়ে হাড়ে বুঝলাম 
গল্পের শুরু সাদামাটা ফ্রেমে বাঁধাই করা একটা ছবির বর্ণনা দিয়ে  শরতের আকাশে উড়তে থাকা মেঘদলপাহাড়ের সারিনিডল গ্লাস ঝোপে আকীর্ণ পথ  সদ্য বৃষ্টিতে ভেজা ওই পথে দুটো মানুষের প্রতিকৃতিতাদের পায়ের ছাপ ক্রমশ এগিয়ে যেতে যেতে দিগন্তে মিলিয়ে গেছে  এই ছবিটাই গল্পের পুরোটা বলে দেয়। কিন্তু আমরা পাঠকেরা সেটা বুঝতে পারি গল্পের একদম শেষে।

কিরগিয পাহাড়ি স্তেপের কোল ঘেঁষা একটা ছোট্ট গ্রামের এক বৃহৎ পরিবারের ছোট্ট পুত্রবধূ জামিলা  প্রবল প্রাণশক্তিতে ভরপুর অসাধারণ অতুলনীয়া জামিলা  বেণী করা চুল আর মাথায় বাঁধা রুমাল দুলিয়ে সে ছুটে চলে বাড়ির আঙিনায়কৃষি খামারে , স্তেপের ধার ঘেঁষা আঁকা বাঁকা রাস্তায় 

জামিলার কিশোর সঙ্গীতার প্রায় সমবয়সী দেবর সেইত  সেইতের বয়ানেই গল্পটা এগিয়েছে  কিশোর সেইত প্রচণ্ড ভালবাসে জামিলাকে  নিষ্কলুষ কৈশোরিক প্রেম  জামিলাও তার প্রিয় কিচিন বালা ( দেবর ) কে অসম্ভব স্নেহ করে  তাইতো জামিলা অন্য কোন ছেলের সাথে একটু বেশি হাসিমুখে কথা বললে সেইত বালসুলভ হিংসায় জ্বলে মরে 
সময়টা ছিল যুদ্ধের  তাই আর সব তরুণের মতোই জামিলার স্বামী সাদিক যুদ্ধে চলে যায়  প্রায় পুরুষ শূন্য গ্রাম গুলোতে তাই সব কাজের ভার বইতে হয় মেয়েদেরকেই  এমনকি রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের জন্য খাদ্য শস্য পৌঁছাবার দায়িত্বও বর্তায় তাদের উপর 
রণাঙ্গনে শস্য পৌঁছানোর দায়িত্ব পড়েছিল সুন্দরীদক্ষ অশ্বচালক জামিলার ওপর। তাই জামিলা তার প্রিয় কিচিন বালা সেইত আর যুদ্ধ ফেরতা আহত যুবক দানিয়ার কে সঙ্গী করে শস্য বোঝাই অশ্বশকট নিয়ে যেতে থাকে রেল স্টেশনে 
দানিয়ার এক নিঃসঙ্গএকাকী , চন্দ্রগ্রস্ত মানুষ  খোলস বন্দি এক মানুষ দানিয়ার  দানিয়ারের নিঃসঙ্গতা , দানিয়ারের উদাসীনতা কেমন যেন একটা হাহাকারের অনুভূতি এনে দেয়  হয়ত যুদ্ধের অভিঘাতই দানিয়ারের এমন উদাসীনতার হেতু 
কিন্তু কে জানত এই দানিয়ারের ভেতরেই বাস করে এক সুরেলা মানুষ ! একদিন ফেরার পথে রাতের বেলায় বিষণ্ণক্লান্ত মানুষ গুলোর মাথায় গানের ভূত চাপে ! এক অপার্থিবঅন্য ভুবনের কণ্ঠে দানিয়ার গেয়ে ওঠে -----
“O, My mountains, my blue white mountains,

The land of my fathers and grandfathers..........

My mountains, my blue white mountains,
My cradle of life. . ……...”

''আমার সাধের পাহাড় রে.... নীলচে সাদা পাহাড় রে...

তোর বুকেতে জন্ম নিলামবাপপিতেরমোর দেশের  তুই পাহাড় রে...''

দানিয়ারের এই গান তার দুই সহযাত্রীকে মন্ত্রমুগ্ধ করে ফেলে  দানিয়ারের গান যেমন পাহাড়েস্তেপের গায়ে প্রতিধ্বনি তোলেজামিলার হৃদয়েও সেই চিরকালীন অনুরণনের উন্মেষ ঘটায় যে অনুরণন দেশে দেশে যুগে যুগে দুটো মানুষের সত্ত্বাকে এক করে দেয় নিমেষেই 
আর কিশোর সেইত ওই অপার্থিব পরিবেশে সাক্ষী হয়ে থাকে দুজন মানুষের এক হয়ে যাবার গল্পে  সেইত নিজের ভেতর এক অসম্ভব তৃষ্ণা অনুভব করে জামিলা আর দানিয়ারের গল্পকে রঙ তুলির ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলার  কিন্তু সেইতের ছিলনা কোন রঙ অথবা তুলি !
সমাজসংসার সবকিছু ছেড়ে জামিলা আর দানিয়ার দুজন পলাতক পাখি হয়ে যায়  সুখের সন্ধানে দুটি পলাতক পাখি চলতে থাকে অজানা পথে  জানিনা দুঃসাহসী এই পক্ষী যুগল পেয়েছিল কিনা সেই দুর্লভ ভালবাসার সুখ ! তবু তারা পথ চলেছিলএটুকুই আমি জানি !


No comments:

Post a Comment