যে জন্যে প্রতি বর্ষায় কান্না নামে ।। ১৯ এপ্রিল ২০১৩
ইস্কাটন রোডের রাস্তা ধরে আসছি । দেখি এক শ্রীহীন বৃদ্ধ ফুটপাথের ওপর তার শিশুটিকে কোলের উপরে বাম হাতে ধরে বসে আছে । অন্য হাতে শাদা শাদা পান্তা ভাত মাখাচ্ছে । একটু আগের হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়া বর্ষার পানিতে পুরো ফুটপাথ কাদায় মাখামাখি । নোংরা পানি সেই প্যাসেজ বেয়ে অনবড়ত নালার দিকে গড়াচ্ছে । থেকে থেকে প্রস্রাবের বিকট গন্ধ বেরুচ্ছে ওখান থেকে । একটু দাঁড়ালে মাথা ধরে যায় এমনই জঘন্য অবস্থা । তারই ভেতর সংকীর্ণ হয়ে এক কোণায় বসে তাদের খাওয়া-দাওয়ার পর্ব চলছে ! আমি অবাক হয়ে দেখলাম নিজের মুঠোতে খাবলা খাবলা করে খালি ভাত সে শিশুটির মুখে চেপে ধরছে । শিশুটি প্রানপণে চিৎকার করে কাঁদছে আর বৃদ্ধ অসহায় প্রানহীন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে । আমি কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে গেলাম । পাশে বসে বললাম, ‘চাচামিয়া
! বাচ্চা কার ?’
বৃদ্ধ একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল । আমার আথে কথা বলবার আগ্রহ তার নেই । বাচ্চা তারস্বরে চেঁচাচ্ছে । তাকে খাওয়াতে হবে । পঁচে যাওয়া ভাত থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে ।
আমি কিছুক্ষণ বসে থেকে ভাবলাম আমার আসলে কি করা উচিত । পরে মানিব্যাগ থেকে ১০০ টাকা বের করে বৃদ্ধের হাতের কাছে রেখে বললাম, ‘বাচ্চাটাকে
বাসি ভাত জোর করে না খাইয়ে কিছু কিনে দিয়েন ...’
বুড়ো খেঁকিয়ে উঠলো, ‘ভিক্ষা করতে বই নাই । টাকা ফেরত নিয়া যান ।’
‘বাচ্চাটাকে দেখে মায়া লেগেছে বলে দিয়েছি । ভিক্ষা দেই নাই । আর টাকাটা তো আপনাকে দেয়া হয়নি । ওকে দিয়েছি । ওর নাম কি ?’
‘সালমা । ওর নাম সালমা ।’
‘টাকাটা সালমাকে উপহার দিয়েছি । এর বেশী টাকা এখন মানিব্যাগে নাই । এইজন্যেই ছোট উপহার ।’
বুড়ো খেঁকিয়ে উঠলো, ‘ভিক্ষা করতে বই নাই । টাকা ফেরত নিয়া যান ।’
‘বাচ্চাটাকে দেখে মায়া লেগেছে বলে দিয়েছি । ভিক্ষা দেই নাই । আর টাকাটা তো আপনাকে দেয়া হয়নি । ওকে দিয়েছি । ওর নাম কি ?’
‘সালমা । ওর নাম সালমা ।’
‘টাকাটা সালমাকে উপহার দিয়েছি । এর বেশী টাকা এখন মানিব্যাগে নাই । এইজন্যেই ছোট উপহার ।’
বৃদ্ধ অবাক চোখে তাকিয়ে কেঁদে ফেলল । তারপর আর্দ্রকন্ঠে বলল, ‘বাবারে, সকাল থেকে কিছুই খাই নাই । অয়’ও খায় নাই । সালমা আমার নাতনী । ওর বাপে রিকশা চালাইতো । তারে পুলিশ হরতালের মধ্যে ধইর্যাক নিয়া গেছে । টুপি দাড়ি ছিল তো, এইজন্য । আমি রাস্তায় নাইম্যা গেছি । থাকোনের জায়গা নাই । ইনকামের রাস্তা নাই । পঁচা-বাসি ভাত খাওয়া ছাড়া উপায় কি ? আমি বুঝি । বাচ্চা মাইয়া তো এইটা বুঝে না । তারে চাইপ্যা ধইরা খাওয়ান লাগে ।’
আমার অদ্ভুত রকম কষ্ট হতে লাগলো । বৃদ্ধ যেখানে বসে আছে তার ঠিক পেছনেই জাসদের দেয়াল লিখন । যাদের কাছে গরীব আর পেটেভাতে বেঁচে থাকা শ্রমিকই সব । এরা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারায় সেক্যুলার কমিউনিজম আনতে চায় । গণতন্ত্রের ছাপে গড়া এদের লাল রঙ কি সত্যিই এই বৃদ্ধকে বুঝতে পারবে ? অথবা জামাত, বাসদ ? সবাই গণতন্ত্র চায় । কারণ ক্ষমতায় যাবার সবচে’ নির্ভেজাল কৌশল এটি । এখন আবার ‘জোট পদ্ধতি’ চলছে । খুব ভালো । সবাই ভাগাভাগি করে খাচ্ছে । গণতন্ত্র আমাদের কি দিয়েছে ? কিছু অপ-রাজনীতি দিয়েছে । কিছু রাজনীতিবিদ দিয়েছে । যারা একে অন্যকে প্রতিনিয়ত কামড়াকামড়ি করছে । জনগণকে নিয়ে পরেরবার ক্ষমতায় গেলে ভাবা যাবে । আগে আখের গুছাই ।
নুরেম্বার্গে গণতান্ত্রিক ব্যাভেরিয়ান বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে হিটলার দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেছিলেন, ‘অভ্যুত্থানে গণতন্ত্রকে হত্যা করবার উদ্দেশ্য যদি আমার থেকেই থাকে তাহলে অবশ্যই আমি নির্দোষ । যেই গণতন্ত্রে ৩০০০ মার্কের বিনিময়ে এক টুকরো রুটি কিনে খেতে হয় সেই গণতন্ত্রকে আমি ঘৃণা করি ।’
সালমার মুখ টিপে ধরে নষ্ট ভাত গেলানো হয়নি । গেলানো হয়েছে এদেশের নষ্ট গণতন্ত্রকে । যা মলদ্বার থেকে বেড়িয়ে এদেশের মাটিতে মিশে প্রথমে শস্যে ঢুকেছে, তারপর আবার মুখে ঢুকছে গণতন্ত্রের বিষ হয়ে । আমার বাংলাদেশ তাই বিষাক্ত ।
We need a
triumph !
We really need a triumph !
We really need a triumph !
পহেলা বৈশাখ ।। ১৪ এপ্রিল ২০১৩
বৈশাখের প্রথম দিনেই দুপুরে রুদ্র রৌদ্রের বদলে টুপটাপ বৃষ্টি । কাঁপা কাঁপা বাতাস । এমন আবহাওয়ায় রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই 'হে ভৈরব হে রুদ্র বৈশাখ ...' লিখতেন না । হয়তো লিখতেন,
'বিষাণ-বৃষ্টি স্কন্ধে' ব্যাপিয়া কোন বীণা হতে বাজি ?
বৈশাখ তুমি নামিছো কোমলে রুদ্রতা ভাঙি আজি !'
বৈশাখ তুমি নামিছো কোমলে রুদ্রতা ভাঙি আজি !'
যাই হোক্ ! বৃষ্টিস্নাত পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা সবাইকে...
উড়াল ঝড় ! ।। ২৯ এপ্রিল ২০১৪
ভিজে চুপচুপ হয়ে ওপরে উঠে এলাম । আঙ্কেল-আন্টি দুজনেই বাসায় । তারা শঙ্কিত মুখ করে তাকিয়ে ছিল । কিছু বলল না যদিও । তবে চেহারার ভঙ্গীই বলে দেয়, ‘এই ছেলে উন্মাদ ! বদ্ধ উন্মাদ !’ । আমাকে নামতে দেখেই ভড়কে গিয়েছিলেন । বাইরে ঝড় হচ্ছে । বিজলী চমকাচ্ছে ঘন করে । এর মধ্যে এই ছেলে বাইরে যাচ্ছে কেন ? নীচে নামতেই বর্ষা ফুলে ফেঁপে উঠল । আমি ভিজতে ভিজতে মগবাজার মোড়ের দিকে এগুলাম । এমন উপলক্ষ্য খুব বেশী একটা আসে না । এমন জমাট ঝড়-বৃষ্টিতে ভেজা হয় না অনেকদিন । তার ওপর ভ্যাপসা গরমে ঢাকার অবস্থা এতোগুলো দিন ধরে ছিল বেহাল । মগবাজারে ফেলে রাখা কনস্ট্রাকশনের ধূলিবালি নিয়ে টর্নেডো-টাইপ কিছু একটা হচ্ছে কিছুদিন যাবত প্রায়ই । এর মধ্যে আজকেরটা জমাটি । সেইরকম ! বাতাসের
বেগ এত যে বৃষ্টিস্নাত রিকশাওয়ালারা সর্বশক্তি দিয়েও প্যাডেল চাপতে পারছে না । তারপরও তার মুখজোড়া ফ্লোরোসেন্ট হাসি । বৃষ্টি তাহলে সত্যিই দেখা দিয়েছে !
এর মধ্যে দেখি এক লোক কালো ছাতি মাথায় চড়িয়ে বাতাস কেটে টেনে টেনে হেঁটে যাচ্ছে । সুবিধা করতে পারছে না তেমন । আমি যারপরনাই বিরক্ত হলাম । শালা, এতদিন পর বৃষ্টি এসেছে- ফুর্তি কর ! উল্লাস কর ! ‘এসো কর স্নান নবধারাজলে’ ... তা না- ছাতা নিয়ে টানাটানি । আমার মুডটাই গেল নষ্ট হয়ে । মনে মনে কতক গালি দিলাম । নিম্নরূচির গালি যা মাথায় আছে- সব । গালিও ঠিকমত মাথায় আসছে না ---
শুধুমাত্র আজকের জন্য সুপ্রীম কোর্ট থেকে ‘কেন মানুষ ছাতা নিয়ে রাস্তায় বের হবে’ জানতে চেয়ে রুল জারি করা উচিত ! আজকের দিনে আবার কিসের ছাতা ? পহেলা বৈশাখে বৃষ্টি হলেও এদেশের মানুষ পান্তা-ইলিশ খায় । অথচ রৌদ্রদগ্ধ বৈশাখ উত্তরণী কালবৈশাখী এরা উদযাপন করতে ভুলে গেছে । হতাশাজনক । অত্যন্ত হতাশাজনক । লোকটার হাত থেকে দমকা বাতাসে ছাতি উড়ে গেল । এইবার আমি মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে টং এর চাচামিয়াকে ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ের অর্ডার দিলাম । সাথে সিগারেট । আজ গুদাম গ্রাম হোক ! এমন উপলক্ষ্য প্রতিদিন আসবে না । সিগারেট বাঁচিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা কঠিন । টেকনিকটা কিছুতেই আয়ত্বে আনতে পারছি না । এটাও হতাশাজনক ।
আজ সারা রাত ঝড় হলে কিছু জম্পেশ প্ল্যান হওয়া প্রয়োজন । সারা রাত ছাদে বসে আড্ডা মারলে কেমন হয় ?? সাথে মাল-মশলা বিপদজনক আইডিয়া । তবে আইডিয়া কারাক্ । একদম কারাক্ক্ !
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ ।। ২৯ মে ২০১৩
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ ।। ২৯ মে ২০১৩
আজ বিকেলে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই মনটা বেশ ফুরফুরে । অকারনেই আশেপাশের সবকিছু ভাল্লাগছে । অকারনেই হাসছি । ভয়াবহ পাগলামির লক্ষণ ।
সন্ধ্যায় রিকশার হুড ফেলে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে শান্তিনগর গেলাম । গুনগুন করে অঞ্জন দত্ত গাইলাম,
"বেইলী রোডের ধারে, আমি দেখেছি তোমায়... রাতের অন্ধকারে, আমি দেখেছি তোমায়..." । পোড়া-পোড়া গন্ধের আধ-পোড়া শিক কাবাব - তার সাথে চায়ের সুগন্ধ । বাইরে বৃষ্টি । শেষমেষ ধুম্রকুঞ্জে গা ডুবিয়ে হেলতে-দুলতে আবার ফিরে আসছি রিকশায় করে । হঠাৎ রিকশাওয়ালার গান শুনে খাবি খেয়ে গেলাম । মনে হচ্ছে শচীন দেব বর্মনের কিন্নর কন্ঠে মোড়া টেপ চলছে । আহা !
আমি চেষ্টা করেও কখনোই নিজের মুগ্ধতাকে নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারি না । আজকেও পারলাম না । গলা বাড়িয়ে উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে বললাম, 'মামা, আপনার কন্ঠের সঙ্গে একজন বিখ্যাত শিল্পীর গানের গলা হুবহু মিলে যায় । মানুষটার নাম হচ্ছে শচীন দেব বর্মন । শচীন দেব বর্মনকে চিনেন ?'
'হুম । চিনি ।'
'হুম । চিনি ।'
বলেই আর অপেক্ষা করলো না । শচীন দেবের "শোন গো দখিন হাওয়া প্রেম করেছি আমি..."
ধরলো । আমি পুরোপুরি বিস্মিত, স্তম্ভিত । সে ততক্ষণে তার অদ্ভুত গানের মায়াজালে দ্রুত চারপাশের সময়কে আটকে ফেলতে শুরু করেছে । মেঘলা মেঘলা সন্ধ্যায় শচীন দেব বর্মন রিকশা চালিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে । এটা হতে দেয়া যায় না ।
'মামা, রিকশা থামান ।'
'মামা, রিকশা থামান ।'
রিকশা থামলো । আমি বললাম, 'নাম কি আপনার ?'
'মোহাম্মদ মিঠু । মিঠু নামটা এখন যেমন চাইরদিকে শুনা যায়, আমার সময় এমন ছিল না । পাকিস্তান আমলে জন্ম তো । পাকিস্তানি এক নায়কের নামে নাম রাখছিল আমার ।'
'মিঠু মামা, আপনার গানে আমি মুগ্ধ । আমার পরিচিত কোন সঙ্গীত পরিচালক থাকলে আপনাকে ধরে নিয়ে যেতাম ।'
'মোহাম্মদ মিঠু । মিঠু নামটা এখন যেমন চাইরদিকে শুনা যায়, আমার সময় এমন ছিল না । পাকিস্তান আমলে জন্ম তো । পাকিস্তানি এক নায়কের নামে নাম রাখছিল আমার ।'
'মিঠু মামা, আপনার গানে আমি মুগ্ধ । আমার পরিচিত কোন সঙ্গীত পরিচালক থাকলে আপনাকে ধরে নিয়ে যেতাম ।'
মিঠু মামা হাসলেন । তার চেহারা সুবিধার না । হাসলে ফোকলা দাঁত বেড়িয়ে পড়ে । এই লোক কোন এক কাজী নজরুলের সান্নিধ্য পেলে 'হিজ মাস্টার্স ভয়েস' এর নামী শিল্পী হয়ে যেত । এখন সে রিকশা চালিয়ে সংসারের চাকা ঘোরায় । কোন মানে হয় ? টাকা মিটিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাসায় চলে এলাম । 'অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ' । আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল ।
এমন বাদল বেলা... ।। ১৩ মে, ২০১৪
বাসা থেকে বের হয়েছিলাম শার্ট আর পাঞ্জাবী ইস্ত্রীতে দিতে । তখন ঝড়ো বাতাস ! আমি ভাবলাম এই বাতাসে ভেসে ভেসে বেইলী রোড চলে যাই । মাথায় এল- আর হাঁটা শুরু করে দিলাম । চিন্তাভাবনাহীন
হনহন করে হাঁটা । যেন কোন কাজ আছে, দ্রুত গিয়ে একটা কিছু ধরতে হবে , কিছুদূর গিয়েছি, এর মধ্যে শুরু হল উথাল-পাথাল ঝড় । কিছুক্ষণের মধ্যেই মাঝরাস্তা ভিজিয়ে নিয়ে পা-ডোবা জল এনে দিল ঝুম বৃষ্টি । আহা, বৃষ্টি ! ভিকারুন্নিসার সামনের বোগেনভেলিয়া ঘেরা রাস্তা ধরে ভিজতে ভিজতে এগুলাম কিরন মামার ঢাকাইয়া চাপের দোকানে । গরম খাবার গোগ্রাসে গিলে আরেকধাপ ভেজা ... হঠাৎ বৃষ্টি অন্য ধরনের এক প্রশান্তি এনে দেয় । সেই শান্তি নিমেষমধ্যে মনের ভেতরটা হিম-ঠান্ডা করে দিতে পারে । আমারটাও হয়েছে । শহরটাকে কেমন আপন-আপন লাগছে ! এমন খুব কমই হয়েছে -ঢাকাকে 'জাদুর শহর' মনে হয়েছে খুব কম বারই । ঢাকা ! পছন্দের এক মানুষের পছন্দের শহর ! শহরের বৃষ্টি কি এক নস্টালজিয়ায় ফেলে দিল- ! বৃষ্টির গাঢ় ঝুম-ঝুম ব্যাকগ্রাউন্ডে কানের কাছে কে একজন ফিসফিসিয়ে গেয়েই চলেছেঃ
Photographs
lost in time are all I see
A pointless nostalgic
That's me, that's me
A pointless nostalgic
That's me, that's me
Thoughts
running round my head today
Times from the past popping up
Where they're from I don't know
Reminiscing my cares away
Wishing I could go back and change
The points that were low
Till I've realized what life's meant to be
Times from the past popping up
Where they're from I don't know
Reminiscing my cares away
Wishing I could go back and change
The points that were low
Till I've realized what life's meant to be
Photographs
lost in time are all I see
A pointless nostalgic
That's me, that's me...
A pointless nostalgic
That's me, that's me...