Friday, November 14, 2014

তোমাকে !

আমার জমজ কবিতা লিখবার গল্প দিয়ে শুরু করি অনেক আগে একদিন, তারিখটা ঠিকঠাক করে বলতে গেলে জ্যৈষ্ঠ, ১৪১৪ (২১ মে, ২০০৭), খুব হৈ-রৈ করে একটা কবিতা লিখতে বসেছিলাম কবিতার নাম ঠিক করা আছে আজই লিখে ফেলতে হবে এমন লিখে ফেললামও লেখা শেষে দেখলাম কিছু চরনের ছন্দ মিলছে না সমস্যা হচ্ছে ওগুলিকে ছেঁটে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে না কথাগুলি সুন্দর এমন সুন্দর বাক্যগুলি কিছুতেই ফেলে দেয়া যায় না ঐসব লাইন দিয়ে তৈরী হল আরেকটা কবিতা কো-ইন্সিডেন্টালি একই সময়ে দুটা কবিতা লেখা হয়ে গেল জন্ম নিল জমজ কবিতা
সাধারনত জমজদের নাম দেয়ার কৌশল চমৎকার হয় যেমনঃ একজনের নামসানহলে আরেক জনের নাম মিলিয়ে রাখা হয়মুন সান-মুন একজনের নামদিবাহলে আরেক জনের নামরাত্রি দিবা-রাত্রি একসঙ্গে ডাকতেও ভাল লাগে এরকম কোন নাম দেয়া গেলে স্বস্তি পেতাম কিন্তু নাম যেহেতু আগের ঠিক করা তাই কবিতা দুটির নামও হল একইরকম এক নামের লোকজনদের যেমন নাম্বার দিয়ে ডাকা হয় (যেমন, দীপু নাম্বার টু), এই কবিতা দুটিরও একই অবস্থা হল এক জনের নাম হলঃ তেঁতুল বনে জোছনা- আরেকজনেরঃ তেঁতুল বনে জোছনা- !
এবার আসি এই যে নাম বদলানো গেল না, তার কি কারন সেই প্রসঙ্গে একজন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক তার একটি উপন্যাস বইয়ের ফ্ল্যাপে লিখেছিলেনঃ
মাঝে মাঝে আমার খুব কবিতা লিখতে ইচ্ছা করে তখন কাগজ কলম নিয়ে বসি এবং খুব আয়োজন করে কবিতার একটা নাম ঠিক করি ব্যাস এই পর্যন্তই কবিতার শিরোনাম লেখা হয়, কবিতা আর লেখা হয় না বুদ্ধিমান পাঠক আশা করি এর মধ্যেই ধরে ফেলেছেন যেতেঁতুল বনে জোছনাআসলে একটা কবিতার নাম যে কবিতা লেখা হয় নি, এবং কখনো হবেও না
এই হচ্ছে জমজ কবিতা লেখার ইতিহাস বিখ্যাত ঔপন্যাসিক নিজেকে বলতেনদুঃখী বলপয়েন্ট তার একটি নাম ঠিক করে রাখা কবিতা লিখতে না পারার হতাশাবোধ আঁচ করতে পেরে কোন একটি ছেলে দুমদাম জমজ কবিতা লিখে সবাইকে বলে বেড়াতে লাগলোঃ হুমায়ূন আহমেদের জন্য লেখা কবিতা ! এই তথ্য জানলেও কি তিনি নিজেকেদুঃখী বলপয়েন্টবলতেন ? আমি জানি না যে কথাটি জানি এবং মনে করে রেখেছি সেটি হচ্ছে কদিন আগে ছিলো সেই দুঃখী বলপয়েন্টের জন্মদিন জন্মদিনে কি আর উপহার দেই জমজ দুটি কবিতাই দিলাম !
শুভ জন্মদিন
হুমায়ূন আহমেদ !











তেঁতুল বনে জোছনা-


প্রেমিকের সাথে তার হয়েছিল দেখা
সেই কবে তারপর রয়ে গেছে একা
কেঁদে গেছে চোখ তারতাই দেখে নীলাকাশ কেঁদে হল ছাই
বিবর্ণ বৃষ্টিতে ভেঁজা কালো কোটরের
পেঁচাদের ঘুম পেল তাই !
কার্নিশ ছুঁয়ে ছুঁয়ে নেচে নেচে জলকণা পড়েছিল খসে
প্রেমিক তখনও ছিল আঁধারের ঘরে একা বসে
দুজনেই ভেবেছিল— ‘প্রেম তবু যায় নিকো ঝরে
বৃষ্টিকণার সম’, দুজনার চোখে তাই প্রেম ছিল গোধূলীর লাল রঙ্‌- পড়ে
পড়েছিল জোছনাবেলায়
পড়েছিল সমুদ্রের জলে
পড়েছিল রোদে ভেজা অপূর্ব মাহেন্দ্রক্ষণে !
প্রেমিকার হাত ছুঁয়ে যেদিন প্রেমিক পথ চলেছিল হেঁটে
সেইদিনও স্বর্ণালী ঘ্রাণ ছিল শালিখের পেটে
সেইদিনও ঝড় হত চৈত্রের শেষে
আমাদের সবুজাভ জোছনার দেশে
তারপর নিভে গেল প্রেম
সে প্রেমিকা কেঁদে বলে— ‘বুঝলেম,সবই ছিল মেকী ?
ভালবাসা-অভিনয় একসাথে করে গেছো,ভুলে গেছো কালো চুল ছুঁয়ে দেখাদেখিভুলে গেছো দুজনার অভিমানী দিন
ভুলে গেছো জোছনা বিলাস
মনে আছে শুধু-  ঝরা পাতা, মল্লিকা, তৃণ
ভুলে গেছো স্মৃতিমাখা কবিতা— ‘আট বছর আগের একদিন’...’
প্রেমিকের মনে পড়ে সব,ঢেকে যায় অস্ফুট ধ্বনির আড়ালে
মনে পড়েলাশকাটা ঘর, স্মৃতির অরণ্য মাড়ালে
তারপর মনে মনে হেঁটে চলে তেঁতুলের বন
বনে জাগা প্রেমকাঁটা হেসে বলে,ছিঁড়ে ফেলো অতীতের সব বন্ধন !’
জানে কি সে ? —কিছু কিছু প্রেম প্রেম নয়
কিছু কিছু অভিমান নয় অভিমান
ইহাদের মাঝেতেও ভালবাসা রয়
হয়তোবা ফুল হয়ে ফোটে না কখনো...
হয়তোবা থাকে শুধু সেমন্তীর ঘ্রাণ !!
আর বুঝি কোনদিনই হবে না দেখা
তেঁতুলের বনে কোন আশ্বিনা জোছনায় তুমি-আমি রবো না একা,
নাই হল দুজনার পুনরায় দেখা...’
প্রেমিকের গভীর অবসাদ;
ঝরে না তবু প্রতিবাদ


তেঁতুল বনে জোছনা-


হাঁটছি আমি তেঁতুল বনের অন্ধকারে মহাপথের পথে...
ধূসর পেঁচার ডাক শুনে কে থমকে দাঁড়ায়, তাকায় আমার তরে ?
জিউলি-নোনার ঘ্রাণ পেয়ে যাই তাহার আলোর রথে
আসবে তুমি ? ধরবে হাত ?           আসমানী এক শাড়ি আর এক কাঁচপোকা টিপ পরে ?
দেখেছি নীল তারার কাঁদন বনবাদাড়ের জোনাক দেখার শোকে
আর দেখেছি অশ্রুসজল চাঁদের আঁখিকষ্ট তাদের দিঠে
এদের মাঝেই হাসতে তোমায় দেখেছে সব লোকে
মিথ্যে কি হয় ?           পায়েল পায়ের ছিল, ছিলও কাল-রঙা তিলক তোমার পিঠে
তোমার হাসি কাটা বাঁশের বাঁশির মতন বেজে
সুরের মায়ায় অসুর টেনে ইন্দ্রপুরী আনে
আবার সেথায় তোমার মাঝেই আরেক তুমি সেজে
আমার চোখের বৃষ্টিগড়া
           দুল পরো কানে
গগনতলে আমায় বলে আসতে ভেঁজা ছাদে
মোদের করুন ছেলেমীতে বধির ছাদও কাঁদে
কত কথাই বলব করে ভেবেছিলেম আমি
ভাবতে গেলেও সেসব কথা আজকে আমি ঘামি
হল না সেই কিশোরীকে বলা সেসব কথা
জরীর রঙে হল না সে আমার প্রিয়ংবদা
ঝগড়া করেই কাটিয়ে দিল অভিসারের বেলা
অবেলাতেই আমার বেলা করিয়া কালবেলা
তোমায় মন চিনল না তাই আমায়বোকাবলে
আমার হলুদ পান্‌জাবীতে নতুন আলোক দিয়ে
হাসির মাঝেই বাসলে ভাল উপহাসের ছলে
করলে প্রদান প্রেমের সুধা
          আমার গরল পিয়ে
জোছনা আমার লাগল গায়ে পঁচিশ বছর পরে
শত জনম শেষ হল আজ নতুন তৃষার ছায়ে
এরই পানে দিন গুনিনু হাজার বছর ধরে
পেলাম শেষে শেষ নিমেষে
            তারার সমবায়ে
আমার হাতে তোমার দেয়া পাঁচ পদ্মের নীল
তোমার হাতে সহস্র ফুল মিশল হাজার রঙ
সহস্র সেই পুষ্প হতে পদ্মগুলির মিল
এবং অমিল বের করে কি
           ভাঙবে প্রেমের জঙ্‌ ?
হয়ত তোমার হৃদয় রঙিন অনেক প্রসুনঘ্রাণে
ভালবাসি’ –এই শব্দখানিও অনেক বেজেছে কানে
রূপসী তোমায় হয়তো অনেক প্রেমিক বেসেছে ভাল
আঁধারে কেবল আঁধার এঁকেছ, কাউকে দাওনি আলো
আমায় ছোঁয়ালে মদিরার জাম, পিয়ালে প্রেম পিয়া
ইউরিডিসের মত ভালবেসে হৃদে জ্বেলে দিলে দিয়া
ঘুচেছে আঁধার তবু কেন জানি মাঝে মাঝে অমাবতী
নভে ছেয়ে যায় আপন ইচ্ছায়; মানে না অসম্মতি
হয় একদিন হেডিস হতে সে ইউরিডিসের প্রেম
আনব কিনে ফিকে হলুদ পিউলির বন ভেঙে
নয়তো কোন আশিন মাসে ভালবাসার ফ্রেম
ছিন্ন করে হয়ত যাবে
অন্য মনে রেঙে...
কান্না আমার মুছিয়ে দিতে থাকবে না কেউ আর
সেদিন ঝরে পড়ব আমি প্রচন্ড সেই ঝড়ে
হৃদয় ? —সেও দুঃখ পাবে তোমার প্রতীক্ষার
কিইবা ক্ষতি হবে
যদি তোমার মনে পড়ে...

...আমার কথা ! যদি আবার বাঁধো আমায় গানে
তেঁতুল বনে জোছনা ক্ষণে তোমার মনে মনে
চান্নিপসর সেই সে রাতে হারাই কোনখানে
যদি আবার জোছনা ঝরে...আবার তেঁতুল বনে... !