Wednesday, June 19, 2013

মনোলগ - যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে


আমার মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করে। খুব নিঃশব্দে, কাউকে না জানিয়ে, অথবা কারও জন্যে কোনওভাবে বিরক্তির তৈরি না করে। আমার চলে যেতে ইচ্ছে করে, যেন আমার জন্মই হয় নি অথবা আমার কোন অস্তিত্বই ছিল না। যেন আমি কোন পথ হাঁটি নি, যেন আমি কোনও পায়ের ছাপ রাখি নি কোথাও। যেন আমি লিখি নি কোন গল্প, অথবা গাই নি কোন গান। নিভৃতে, কারও জেনে ফেলার আগেই, মুছে ফেলতে ইচ্ছে করে ভুল করে তৈরি করে ফেলা আমার অ্যাকাউন্ট।

মরে যাবার আগে, আমার একটি বারের জন্যে ইচ্ছে করবে না কারও মুখচ্ছবি মনে করে সামান্যতম দুঃখবোধে সিক্ত 'তে অথবা কারও কণ্ঠধ্বনি শুনে - পৃথিবী আসলে বড্ড ধোঁয়াটে সুন্দর - সেই কথা দ্বিতীয়বারের জন্যে ভাবতে। হোক সে আমার জননী, যার কাছে আমি নিতান্তই নিরুপায় ক্ষমাপ্রার্থী হবো হয়তোবা আমার অসহায়তার জন্যে, অথবা জনক কিংবা আনন্দময় শৈশবের জন্যে সবসময় কৃতজ্ঞ থাকা বন্ধুরা । হয়তো আমার ইচ্ছে করবে না আরেকবার নিজের এই সামান্য সময়ের ভন্ড জীবনটুকুর জন্যে কোন অতৃপ্তিবোধে আচ্ছন্ন হতে।

কিন্তু,আমি যেহেতু মফিজ, জয়নুল, ছগিরুল অন্য সবার মতোই খুব স্বাভাবিক, খুব গুডি বয়দের মতোন ম্যাঁদামারা জীবন যাপন করে এসেছি। এবং আমি মহামানব নই, নই সামান্য প্রতিভাবানও। তাই, হয়তো জেগে উঠতে পারে সামান্য লোভ, তুচ্ছ মনের কোন এক কোণে। ইচ্ছে করতেও পারে জীবনকে কখনোই ভালোবাসতে না পারার ব্যর্থতাটুকু নিয়ে আরো কিছু ক্ষণ, কিছু পল অর্থহীন ভাবনা রচনা করার চেষ্টা করতে।

হয়তো ইচ্ছে করে বসতে পারে, আরেকবার হেঁটে যেতে চিরচেনা পথ ধরে আমার শৈশবের পাঠশালায়। অয়ন নামের একজন প্রিয়জন কাল মনে করিয়ে দিলো, আমাদের স্কুলের মাঠটা অনেক বড় ছিলো। সেই মনে করিয়ে দেবার সূত্র ধরে কিছু নিউরন উত্তেজিত হয়ে, মনে করার দরকার নেই এরকম স্মৃতিকে, ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে পারে।


ফ্লাশব্যাক আমাকে ভাবাতে পারে, বিরক্ত করতে পারে। তবুও আমার মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করে খুব কোনওরকম পিছুটান ছাড়াই। সবকিছুকেই অতিক্রম করে চলে আসলে যে শূন্যতা থাকে, তাকে স্পর্শ করার মতো সাহস যখন হয়ে যায়, তখন মুক্তির প্রত্যাশাই অনেক বড় হয়ে ওঠে।

এতোকিছুর পরেও আমি বেঁচে থাকি নির্লজ্জ্বের মতোন। আমিও আরেকজন মফিজ অথবা রহিম-করিম, রাম-যদু-মধু। আপনার অথবা তার মতোন আমিও স্বপ্ন দেখি, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী পাঁচ-ছয় মাস পরে হয়তো বাড়ি ফিরে যাবো । তারপরে পুড়ে যাওয়া অর্থনীতির দুর্যোগের সময়েও হয়তো দাসত্ব করবো কোথাও।

এইভাবে আপনার মতোই আমিও বাঁচি।
আগামীকাল অথবা আগামী মাস কিংবা আগামী বছরও হয়তো বেঁচে থাকবো।
তবুও এইসব সময় যখন আসে, তখন ভেবে পাই না, আসলে কী করা উচিত। আমি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে উঠি, আমি তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর হয়ে যাই। আমার কানে বাজে সেই গান আর কান্না - সব যে হয়ে গেল কালো, নিবে গেল দীপের আলো, আকাশ-পানে হাত বাড়ালেম কাহার তরে?